নির্মল রায় গঙ্গাচড়া (রংপুর) :
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বেড়েছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধ কেটে রাতভর চলছে তিস্তার বালুর লুট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়ায় তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ডান তীরে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা থেকে গজঘন্টা ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ৮টি অবৈধ বালুর পয়েণ্ট খুলে ড্রেজার মেশিন ও ট্রলি দিয়ে রাতভর অবৈধ বালুর ব্যবসা করছেন স্থানীয় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু স্থানে তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধ কেটে সরাসরি নদীতে ট্রলি নামিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কেউ আবার বাড়ি করার কথা বলে আগে বালু উত্তোলন করে পরে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সম্প্রতি উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কালীর চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী রক্ষা বাঁধ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বালু । সাংবাদিক আসার কথা শুনে কেটে দেয়া বাঁধ মেরামত করছেন।
সাবুল মিয়া (৩০) নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছে বাঁধ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘কারা বাঁধ কাটছে আমি কিছু জানি না, একটু আগে কয়েকজন ট্রলি চালক আমাকে ৩শ টাকা দেওয়ার কথা বলে ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থানগুলোতে মাটি দিয়ে সমান করে দিতে বললো তাই সমান করছি।
পাশেই একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা, এসময় তাদের কাছে বালু তোলার বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, ‘আমাদের এই কালীর চরে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী তিস্তার বাঁধ কেটে নদীতে ১৬ থেকে ১৭টি ট্রলি নামিয়ে দিয়ে রাত ১০টার পর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করেন।এখানেই যে শুধু বালু উত্তোলন করেন তা কিন্তু নয়। আমাদের এই কালীরচর থেকে শুরু করে মর্ণেয়া, গজঘন্টা ইউনিয়ন পর্যন্ত নদীর ধারে ৭ থেকে ৮টি বালুর পয়েন্ট হয়েছে। প্রতিদিন এই পয়েন্টগুলো থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।
উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের মৌভাষা এলাকার বাসিন্দা জামাল মিয়া বলেন,‘ কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার ট্রলি চালক ও বালু ব্যবসায়ীরা বাড়ি করার কথা বলে তিস্তা থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তুলে সেই বালু এখন বিক্রি করছেন শুধু আমাদের মৌভাষাতেই নয় এখানকার কয়েক ব্যক্তি বাড়ি করার কথা বলে নদী থেকে বালু তুলে পরে তা বিক্রি করে দেয়। স্থানীয় লোকজন কিছু বললেই হুমকি দেয়।
গজঘন্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক এলাকার বাসিন্দা জাহানুর বলেন,‘বালু ব্যবসায়ীরা যেভাবে তিস্তার বাঁধ কেটে, ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছেন নদীতে পানির একটু চাপ বাড়লেই বাঁধ উপছে লোকালয়ে পানি ঢুকে পরবে। এসব দেখার কি কেউ নাই?
এবিষয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের সাথে ঘটনাস্থলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ট্রলি রেখে পালিয়ে যায়।
তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না বলেন,‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলেই এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল,জরিমানা এবং নিয়মিত মামলা করা হবে।