চিলমারীতে অনুমতি ছাড়াই কাটলেন সরকারি গাছের ডাল

আমাদের প্রতিদিন
2024-10-11 14:16:15

হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অনুমতি ছাড়াই কাটলেন সরকারি গাছের বড় ডাল। সরেজমিনে জানাযায়, গত রবিবার (১লা সেপ্টেম্বর) চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের, বকুলতলা বাজারের সরকারী সেই বকুল ফুলের গাছের বড় বড় ডাল কেটে নিয়েছেন, সরকারী কোন অনুমতি ছাড়াই। তবে এই গাছের কিছু ডাল বিক্রি করা হয়েছে, আর কিছু ডাল হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে কাজের জন্য দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে স্থানীয় দোকানদার আঃ সালাম, এনামুল হক, রিয়াজুল ইসলাম, মানিক চন্দ্র, আঃ কাদেরসহ আরও অনেকে বলেন, এই বকুল গাছের পশ্চিম দিকের একটি বড় ডাল গোড়ায় পচন ধরার কারণে ভেঙ্গে পড়েছেন। আর এই ডালটি ভেঙ্গে মেইন রাস্তায় পরার কারণে শতশত মানুষের রাস্তা পারাপারে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে গাছটির ডাল কাটা হয়েছে বলে জানান তারা। অন্য ডাল গুলো কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, পুর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ডাল গুলো কাটার তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। তবে কেন কাটা হয়েছে তা আমাদের জানা নাই বলেন তারা। এ বিষয়ে ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আয়নাল হক বলেন, বকুল গাছের পশ্চিম দিকের ডালটির গোড়ায় পচন ধরার কারণে অনেক দিন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। যায় কারণে এই ঝুঁকিপূর্ণ ডালটি কাটার বিষয়ে আমি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারকে জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ঝুঁকিপূর্ণ ঐ ডালটি ভেঙ্গে পরে যায় এবং শতশত মানুষের রাস্তা পারাপারের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। তখন আমি ইউএনও স্যারের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি এবং ৬জন কামলা (দিনমজুর) নিয়ে গাছের ডাল গুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলি। পরে তা বিক্রি করে ঐ ৬জন কামলার মজুরি দেই বলে জানান তিনি। অন্য ডাল গুলো কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসে অন্য ডাল গুলো কাটা দেখে রাগারাগি করার পরে জানতে পারি,  উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সচিনন্দ্র নাথ, এসে ঐ ডাল গুলো কেটে তাদের স্থানীয় মন্দিরে কাজের জন্য দিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, বকুল ফুলের গাছের ডাল কাটার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা, আমাকে কেউ এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সচিনন্দ্রনাথ বলেন, বকুল ফুলের গাছের একটি ডাল ভেঙ্গে পড়েছে আর কয়েকটা ঝুঁকি মনে হয়। তখন আমি ইউএনও স্যারকে এবং আর্মিকে বলি ইউএনও স্যার ও আর্মিরা আমাকে গাছের ডাল কাটতে বলেন। ঐ গাছ মন্দিরের না সরকারি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্দিরের না সরকারি তা আমি জানি না, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা বন বিভাগ ভারঃ কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ঐ বকুল গাছের বিষয়ে আমার সাথে কেউ কথা বলেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সচিন বাবু আমার সাথে কথা বলেছেন। তিনি আমাকে  বলেছেন একটি ডাল ভেঙ্গে পড়েছেন তা কাটতে হবে আর বাকি ডাল গুলোও ঝুঁকিপূর্ণ আছে। তখন আমি বলেছি, ঐ ইউনিয়নের মেম্বার ও চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন। তারপর গাছটি মন্দিরের জায়গায় না সরকারি জায়গায় আছে, আগে সেটি নির্ধারন করুন, তারপর মন্দিরের জায়গায় হলে মন্দিরের কমিটির সাথে কথা বলে কাটতে হবে। আর সরকারি জায়গায় হলে, বন বিভাগ কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। তারপর সময় নির্ধারন করে প্রয়োজনে নিলামের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ভেঙ্গে পড়া গাছের ডাল বিক্রি করার বিষয়ে ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার আয়নাল হক আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি।  এ দিকে এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে, সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ক্ষোপের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, এই গাছটি হলো অনেক পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী বকুল গাছ, এই গাছের নামে বাজারের নাম রাখা হয়েছিল "বকুল তলা" বাজার। আজ সেই বাজারের সৌন্দর্য্য নষ্ট করা হয়েছে, এটা আমরা কোন ভাবে মেনে নিতে পারছিনা। এ বিষয়ে সঠিক ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।