ধর্ষন মামলার আসামী প্রভাবিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে বাদিনীর আবেদন

আমাদের প্রতিদিন
2024-10-11 06:14:40

আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর):

দিনাজপুরের বিরলে ধর্ষন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী ও আসামীর লোকজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এজাহার নামীয় আসামীদের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব—ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাসান ফারুক। পুণঃতদন্তের আবেদন জানিয়ে বাদীনি গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে নারাজী দিয়েছেন ।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বিরল উপজেলার ৮ নং ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাণীপুর চান্দামারী গ্রামের এক গৃহবধুকে একই ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০) সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বিরল থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরল থানার সাব—ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাসান ফারুক অভিযুক্ত আসামী মনিরুল ইসলাম ও তাঁর স্বজনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্ষন মামলার এজাহার নামীয় আসামীদের মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার বাদীনি ধর্ষিতা জানতে পেয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর/২০২৪ বিজ্ঞ আদালতে পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে নারাজীর আবেদন করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরনী ও মামলার বাদীনি গৃহবধু মনিরুল ইসলামের লালসার শিকারের বর্ননা দিতে গিয়ে কান্না বিজড়িতকণ্ঠে বলেন, বিরল উপজেলার ৮ নং ধর্মপুর ইউনিয়নের রাণীপুর চান্দামারী গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্বামী একজন রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। একই ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০) পুর্ব পরিচিত ও রড—সিমেন্ট ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করত। তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে মনিরুল ইসলাম তাঁকে বিভিন্ন সময় কু—প্রস্তাবসহ তাঁর স্বামীকে ছেড়ে তাঁর সাথে ঘর সংসার করার প্রস্তাব দিত। তার কু—প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর স্বামীর মাধ্যমে মনিরুলকে বাড়িতে না আসার জন্য বাঁধা নিষেধ করে। লম্পট মনিরুলের কু—প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মনিরুল তাঁর ইজ্জ্বত হননের সুযোগ খুঁজতে থাকে। এমতাবস্থায় গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাত্রি অনুমান সাড়ে ১১ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য ঘরের বাইরে গেলে এ সুযোগে মনিরুল শয়ন ঘরে ঢুকে দরজার পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই মনিরুল তার মুখ চেপে ধরে মেঝেতে শোয়াইয়া জোড়পুর্বক  ধর্ষন করে এবং তাঁর গালে কামড় দিয়ে কালো দাগ বসিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি প্রকাশ না করার জন্য প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবগত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেলে মনিরুল ইসলাম প্রভাবশালী হওয়ায় অন্যান্য আসামী ধর্মপুর মিরাবন গ্রামের সামসুদ্দীন এর ছেলে আরিফ (৩৬) ও একই গ্রামের মৃত আবুল কাশেম এর ছেলে সবুজ (৩৫) এবং রাণীপুর গ্রামের চান্দামারী পাড়ার নজরুল ইসলাম এর ছেলে নাজমুল (৩৬) তাঁকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে ইউনিয়ন পরিষদ হতে বের করে দেয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন বাদীনি।

স্থানীয়ভাবে ঘটনার সুষ্ঠ্য বিচার না পেয়ে ধর্ষিতা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) তৎসহ ৫০৬ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় (ধর্ষন ও ভয়ভীতির অপরাধে)  বিরল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। বিরল থানার সাব—ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাসান ফারুককে মামলাটি তদন্তের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার তদন্তকারী অফিসার সাব—ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাসান ফারুক অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার না করে আসামী ও তার স্বজনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাল্টা বাদীনিকে আপোষ—মিমাংসা করে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। আপোষ—মিমাংসায় বাদিনী রাজি না হওয়ায় হঠাৎ ১৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে হঠাৎ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিন্নাহ আল মামুন বাদিনীর বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে প্রকাশ্য তদন্ত করেন এবং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামীপক্ষের লোকজনসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ উপস্থিত হওয়ায় বাদিনী হতভম্ব হয়ে পরেন। ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মামলার তদন্তকারী অফিসার সাব—ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হাসান ফারুক স্বাক্ষরীত চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে আদালতে পুণঃতদন্তের দাবি জানিয়ে বাদিনী নারাজীর আবেদন করেন। উচ্চ পর্যায়ে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী।