ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে “এই বাড়ীর মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মুসলমান বানানো হবে" এই পোষ্টার গাছে ঠাঙ্গিয়ে দিয়ে দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক হিন্দু ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ছাত্রীর বাবা ফুলবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীসহ ছাত্রীকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ওই গ্রামের অর্জুন চন্দ্র সেনের মেয়ে ছবিতা রানী সেন (১৫) অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার বিকাল ৫ টার দিকে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে একই গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে আলিনুর রহমান (৩৫) ও তার সহযোগীরা মেয়েটিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এর আগে গত ২ অথবা ৩ সেপ্টেম্বর ওই গ্রামের রাস্তার একটি গাছে কে বা কাহারা হাতে লেখা একটি ছোট পোষ্টার টাঙ্গিয়ে দেয়। পোষ্টারে লেখা ছিল" এই বাড়ীর মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মুসলমান বানানো হবে।" এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর ওই এলাকার রনজিত চন্দ্র সেন ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারন ডায়রি (জিডি) করেন।
এদিকে কাশিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অন্তপুর ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু ছালেকসহ স্থানীয়রা জানান, প্রায় চার পাঁচ মাস আগে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে উভয় পরি্ারের অভিভাবকসহ ছেলে মেয়েকে শাসন করা হয়েছে। এরপর পারিবারিক ভাবে আলিনুরের বিয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মধ্যে আলিনুর স্ত্রীকে তালাক দেন। বুধবার আমরা আলিনুরের বাড়ীতে গিয়ে শুনেছি সে বাড়ীতে নেই।
এদিকে অর্জুনের মেয়ে ছবিতা রানীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হয় প্রেমের সম্পর্কের কারনে তারা দুজন অজানার উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছে।
গাছে পোষ্টার লাগানোর বিষয়ে ওই ইউপি সদস্য বলেন, কে বা কাহারা রাস্তার গাছে ওই পোষ্টার লাগিয়েছে সে ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্জুন চন্দ্র সেন বলেন, আমার মেয়ে বাড়ী থেকে কোচিং এ যাওয়ার পথে আলিনুর তার কয়েকজন সহযোগী মিলে তাকে অপহরণ করেছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ করেছি।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নওয়াবুর রহমান জানান, আমরা ওই ছাত্রীসহ আসামীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছি। জবানবন্দিতে ভিকটিম কিশোরী জানায়, "তাকে অপহরণের বিষয়টি সত্য নয়, যুবক আলিনুরের সাথে তার দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক। এ কারনে আমার পরিবার আলিনুরকে ফাঁসানোর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এমনকি আলিনুরকে মেরে এলাকা ছাড়া করারও পরিকল্পনা করা হয়। এ কারনে প্রেমিককে পরিবারের লোকজনের হাত থেকে বাঁচাতে আমি তার সাথে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাই। আমি কুড়িগ্রাম নোটারী পাবলিক এ এভিডেভিড এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি এবং ইমাম সাহেবের মাধ্যমে আলিনুরের সাথে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।"
অফিসার ইনচার্জ আরও জানান, যেহেতু ভিকটিমের বয়স কম সেহেতু বিজ্ঞ আদালত তাকে তার পিতার জিম্মায় পাঠাতে চেয়েছেন। কিন্ত ভিকটিম পিতার জিম্মায় যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিজ্ঞ আদালত তাকে রাজশাহী শিশু সংশোধনাগারে প্রেরণ করে প্রেমিক আলিনুরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব, প্রেম পরিনয়, ব্যক্তিগত পারিপার্শ্বিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যু না বানানোর জন্য সম্মানিত নাগরিককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।