সাখাওয়াত হোসেন, রৌমারী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নির্মাণাধীন সেতুর মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি সড়কসহ সেতু নির্মাণ। এতেই বিভিন্ন এলাকার জনগণসহ শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
নির্মাণধীন সেতু ব্যবহার করতে রাস্তা বানানোর জন্য সেতুর নিচ থেকে নিয়ম না মেনেই বালু ও মাটি উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে কাজ পাওয়া সাব—ঠিকাদার রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলনের চিত্র দেখাগেছে। এতে এলাকাবাসী সেতু নিয়ে রয়েছেন আতংকে।
বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০, এর ৪ এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি—বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ নির্মাণাধীন এই সেতুর নিচে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, রৌমারীর মাঝিপাড়া মন্ডল পাড়া—শৌলমারী জিঞ্জিরাম নদীর ওপরে নির্মাণাধীন সেতুর নিচে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন কাজ পাওয়া সাব—ঠিকাদার সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ভাই রাশেদুল ইসলাম। ড্রেজার দিয়ে রাস্তা ভরাটের নামে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নির্মাণাধীন সেতুটি বড় ঝুঁকিতে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম, মাসুদ রানা, আব্দুল মালেক, মোবারক হোসেন, আব্দুর রওফ, মন্টু মিয়া বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ভাই রাশেদুল সেতু নির্মাণের কাজের সাব—ঠিকাদার হওয়ায় তার ইচ্ছামতো কাজ করছেন। এতে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের দুভোর্গ এখনও শেষ হয়নি। সেতুর পাশে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন এলাকাবাসী। বাঁশের সাঁকোটিতে প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচল করায় সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।
তারা আরও বলেন, আমরা একাধিকবার প্রতিমন্ত্রীর ভাইকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছামতো করে কাজ করছেন এবং সেতুর নিচে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে সেতু ব্যবহার করতে রাস্তা তৈরি করছেন। এতে সেতুটি বড় ঝুঁকিতে পড়ছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার বালু ও মাটি উত্তোলনের জন্য কন্ট্রাক (চুক্তি) করে আমার ড্রেজার নেওয়া হয়। তাই আমরা সেতুর নিচে থেকে বালু উত্তোলন করে সেতুর রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।
ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেতু নির্মাণের সাব—ঠিকাদার রাশেদুল ইসলাম বলেন, সেতু থেকে ৩০ মিটার দুরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছি। এতে সেতুর কিছুই হবে না। আর বালু তুলে সেতুর দু’পাশে রাস্তা নির্মাণ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ড্রেজার বসানো ও চালুর বিষয় ইউএনওসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা জানেন। তবে ড্রেজার বন্ধ করতে প্রশাসন বললে বন্ধ করব বলে জানান।
রৌমারী উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, ৩০ মিটার দুরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ চলমান রয়েছে এবং সেতুর সিলাপের ঢালাইয়ের কাজ দু’একদিনের মধ্যে করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী ড্রেজার বসাতে পারি বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার মীর হাবিবুর রহমান বলেন, আমি মেইন ঠিকাদার সত্য। কিন্তু ওই সেতুর কাজটি গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকিরের ভাই রাশেদুল করছেন। সেখানে বালু উত্তোলন হচ্ছে কি না এ বিষয় আমার জানারও প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘২০২১—২০২২ অর্থ বছরের রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প—২ এর আওতায় রৌমারী উপজেলাধীণ মাঝিপাড়া মন্ডলপাড়া সড়ক—শৌলমারী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সড়কে ১৮৫০ মিঃ চেইনেজে ৯০ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজ। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৪ টাকা। কাজ শুরু মেয়াদ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর এবং শেষ সময় ছিল ২০২৩ সালের ২৮ মে।