খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
"খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা.সুমনা আফরিন নিয়মিত দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে,তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না,অথচ হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর রাখেন। স্থানীয়রা এই স্বাক্ষরকে,ভুতুড়ে হাজিরা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত আগস্ট মাস ধরে স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাসপাতালে উপস্থিত না থাকলেও হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নিয়মিত রয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দাঁতের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন অনেক রোগী কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ডেন্টাল সার্জনকে পাওয়া যায় না। ফলে রোগীরা বেসরকারি ক্লিনিক বা শহরের চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হন। এতে তাদের সময় ও অর্থের ক্ষতি হচ্ছে।
একজন স্থানীয় গৃহিণী সেলিনা বেগম বলেন,আমার মেয়ের দাঁতের ব্যথা নিয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তারকে পাইনি। আবার শনিবার গেলেও উপস্থিত ছিলেন না। অথচ হাজিরা খাতায় তার নাম কাটা আছে। আমি ভাবতে পারি না,অনুপস্থিত থাকার পরেও তিনি কীভাবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারেন। এতে আমরা অনেক কষ্টে পড়েছি।
এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,সরকারি চাকরিজীবীরা মানুষের করের টাকায় বেতন পান। যারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না,তাদের কারণে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের নিয়মিত অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে বেসরকারি খাতে রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। একজন প্রবীণ শিক্ষক মন্তব্য করেছেন,স্বাস্থ্যখাত দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। সেখানে ভুতুড়ে হাজিরার মতো অনিয়ম চলতে থাকলে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে।
এ ঘটনা শুধুই ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার নয়;এটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবার একটি বৃহত্তর সমস্যা তুলে ধরেছে। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার ডাক্তারদের অনুপস্থিতি,হাজিরা খাতায় ভুতুড়ে স্বাক্ষর ও রোগীর ভোগান্তি—এই বিষয়গুলো স্বাস্থ্যখাতের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নিলে না হলে,সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় দুর্নীতি ও অসামঞ্জস্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা.সুমনা আফরিন বলেন,আমার অফিসিয়াল ব্যাপারে আমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমি এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমার কোনো সহকারী নেই। যদি সিস্টেম দেওয়া হয়, তবে আমি নিয়মিত চিকিৎসা করব।তবে হাজিরা খাতায় ভুতুড়ে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শফিকুল ইসলাম বলেন,ডা. সুমনার দুই সন্তান আছে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এসে এখানে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে মাঝে তাকে ক্যাজুয়াল ছুটি দেওয়া হয়।তবে হাজিরা খাতার স্বাক্ষর দেখাতে এড়িয়ে যান।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা.আসিফ ফেরদৌস জানিয়েছেন,কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে অনুপস্থিত থাকার কোনো সুযোগ নেই। এর আগে তাকে শোকজ করেছি। পুনরায় সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে বায়োমেট্রিক সিস্টেম স্থাপন করব। আশা করি এরপর আর কোনো সমস্যা থাকবে না।