পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের পীরগাছায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র। ছোট ছোট প্রকল্পে সৌন্দর্য বৃদ্ধি, চলাচলের রাস্তা তৈরি, মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং সোলার সিস্টেম কার্যক্রমে আশার আলো দেখছে পীরগাছা উপজেলার মানুষ। কঠোর তদারকি আর কাজের গুনগত মান রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং ৩৬৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য (চাল এবং গম) ব্যয়ে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার ও ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টি আর) খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব বরাদ্দের আওতায় ৩৪৪টি প্রকল্পের কাজ এখন দৃশ্যমান।
স্থানীয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পীরগাছা উপজেলায় ‘গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার’ (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় প্রাপ্ত বরাদ্দের বিপরীতে ১৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্পে মধ্যে ৯.৫৭১ কিলোমিটার সিসি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তার ধার ও অত্র দপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ৫ টি ব্রীজের এপ্রোচের মাটি ধরে রাখার জন ১.৫১৫ কিমি গাইড ওয়াল নির্মাণ, ১৪.৭০১ কিমি কাচা রাস্তা সংস্কার, মাঠ উন্নয়ের লক্ষে ১৯১০৫ বর্গমিটার মাটি ভরাট, নির্মিত ৫৬ টি ব্রীজ-কালভার্টের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এপ্রোচে মাটি দ্বারা সংস্কার ও রং করণ, উপজেলায় ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য ত্রাণ গোডাউনের নির্মাণ করা হয়।
আর ‘গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন’ (টি আর) কর্মসূচীর আওতায় ১৮৭ টি ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে ২.৫০ কিমি সিসি রাস্তা নির্মাণ, অত্র উপজেলার সকল ভূমি অফিসে সোলার স্ট্রীট লাইট স্থাপন এবং অত্র উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়েছে।
এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন সময় নির্মিত ৫৪ টি ব্রীজ/কালভার্টের এপ্রোচ সংস্কার এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রঙ করা, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত মাটির রাস্তাসমুহ সংস্কার করা হয়। পিআইও অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণ সকল প্রকল্পের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ আলতাফ হোসেন।
সরেজমিনে বেশ কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠানো উন্নয়নে অল্প বরাদ্দের মাধ্যমে গ্রামের যেসব রাস্তা পাকা হওয়া সম্ভাবনা ছিলনা সেইসব ছোট ছোট রাস্তাগুলো সিসি করনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। ছোট ছোট প্রকল্পের এসব কাজ জনগণের অনেক উপকারে আসছে। যেসব রাস্তা-ঘাটে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি, সেসব এখন দৃশ্যমান। ছোট ছোট রাস্তা সিসি করে পাকা হচ্ছে। মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নে কাজে লাগছে। সড়ক ও অফিসগুলোর বাইরে রাতের বেলা আলো জ্বলছে। এ খাতে আরো বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখেছেন রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, পূর্বের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো: রাসেল।
স্থানীয় কৈকুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কাবিটা প্রকল্পের সভাপতি নুর আলম মিয়া বলেন, বর্তমান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ আলতাফ হোসেন কর্মদক্ষতায় কড়া। তিনি কাজের গুনগত মান রক্ষা, উপুযুক্ত ব্যক্তিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি/সদস্য নির্বাচন এবং প্রকল্প সভাপতিগণের নিজস্ব হিসাব নম্বরে অর্থ ছাড়ের বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন। বিশেষ করে প্রকল্প সভাপতি হিসাব নম্বরে অর্থ ছাড় করায় বাইরের কেউ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ নাই।
ইউপি সদস্য আক্কাছ আলী বাদল ও মশিউর রহমান বলেন, গ্রামীণ উন্নয়নে ছোট প্রকল্পের কোন বিকল্প নেই। এসব প্রকল্পে অনেক কাজ করা যায়। অনেক কাজে লাগে।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরেজমিনে গিয়ে কাজের আগে ও পরের ছবি তুলে, কাজের মান যাচাই করে অর্থ ছাড় করছি। কাজ না করে অর্থ নেওয়ার কোন সুযোগ নাই।