আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ রংপুর:
রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদন কাজে ব্যস্ত জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকার মেহেদুল ইসলাম মিদুল। তিনি এলাকায় ধান চাষিদের ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি আগ্রহ বাড়াতে গত ১৩ বছর থেকে বিনামূল্যে কাজ করছেন। " তিনি একজন পরিবেশবান্ধব ফসল প্রেমি"
জাহাঙ্গীরাবাদ টু কদমতলি এলাকার প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার পাশে ধান খেতে প্রতিবছর নিজের অর্থ ব্যায় করে নিরবে পার্চিং তৈরি করে মানুষের আবাদি ধানের জমিতে পুতিয়ে রাখছেন।
ফসল প্রেমি এ উদ্যোক্তা সুস্থ সবল ফসল উৎপাদন বাড়াতে এ কাজগুলো করে থাকে। চাষাবাদের মৌসুমে ধান বাড়িতে গাছের ডাল, বাঁশের খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি পোতা যেন তার প্রতিনিয়ত কাজ। তার ধারণা পার্চিং এর উপর বসিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় গিলে খাবে। এতে করে চাষিদের কীটনাশক প্রয়োগ অনেকটাই কমে যাবে। আর এই পার্চিং পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত ভুমিকা রাখে। তার এই কাজের আগ্রহ দেখে অনেকেই এখন ধানের খেতে পার্চিং ব্যবহার করছে।
স্থানীয়রা ধান চাষিরা বলছেন, বর্তমানে পার্চিং গুলো রাস্তার দুই ধারে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে দূর থেকে দেখতেও ভালোই লাগে। খেতে পুতিয়ে রাখা বাঁশের বাতির উপর সকাল বিকাল বিভিন্ন জাতের পাখি বসে আহার করে। এতে করে পাখিদের খাদ্য চাহিদা পুরন হয় এবং চাষিদেরও পোকা দমন করতে কিছুটা সাশ্রয় হয়। মিদুল মিয়া প্রতিবছর নিজ উদ্যোগে এ কাজগুলো করে থাকেন। তিনি এসোগড়ি সমাজ বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে মাঝে মধ্যে এলাকার চাষিদের নিয়ে পরিবেশ বান্ধব ফসল চাষের আলোচন করে থাকেন।
রোববার বিকেলে উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকা ঘুরে কথা হয় মেহেদুল ইসলাম মিদুল এর সাথে। তিনি বলেন আমি দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় ঔষধী গাছের চারা উৎপাদন করে আসছি। অনেক চাষির কীটনাশকের খরচ কমে গেছে। আর কীটনাশক প্রয়োগে ফসল নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব নয়। আমরা এমনিতেই সবসময় বিষ মাখা খাদ্য খাচ্ছি এতে করে আমাদের নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পরছি। আমি ঔষধী গাছের চাষ করে কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। অধিকাংশ প্রশিক্ষণে দেখেছি নিজে সুস্থ থাকি এবং অন্যকেও সুস্থ রাখি। এই কথাটি চিন্তা ভাবনা করে আমি যতদুর পারি নিজের অর্থ খরচ করে চাষিদের কে বোঝানোর জন্য এ কাজগুলো করে থাকি।
এলাকার ধান চাষিরা বলছে, অনেক দিন থেকে জনসচেতনতামূলক কাজ করে আসছে মিদুল।
আমন এবং ইরি বোরো মৌসুমে নিজের উদ্যোগে বাশ কিনে রাস্তার পাশে সবার জমিতে পোকা খাদক পাখি বসার জন্য ফাদ পুতিয়ে রাখে। সে কারোই বলার অপেক্ষায় থাকে না। তিনি উপজেলার অনেক রাস্তা ঘাটে ঔষধি গাছের চারাও রোপণ করেছে এবং সেই গাছের পাতা বিক্রি করে টাকা আয় করে। তার জনসচেতনতামূলক কাজ কৃষকদের মনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি।
পীরগঞ্জে ২৫ হাজার ৫ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদনের জন্য পার্চিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায় এতে করে ধানে কীটনাশক প্রয়োগের খচরও কমে যায় বলে কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ জানান। তিনি আরও বলেন কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ৭ হাজার ৫০ হেক্টর ধানের জমিতে পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং চাষিরা নিজ উদ্যোগে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে পাখি বসার জন্য পার্চিং পুতিয়ে রাখে। তবে জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকার মেহেদুল ইসলাম মিদুল তার নিজ উদ্যোগে অই এলাকার কিছু জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। সে এলাকায় ঔষধী গাছের চাষ এবং কেঁচো সার উৎপাদন করে বলে তিনি জানান।