দিনাজপুর ও বীরগঞ্জ প্রতিনিধি:
শারীরিক চরম দুর্বলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন (৪৫)। শরীর চরম দুর্বল থাকলেও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে না থেকে বেশীরভাগ সময় থাকছেন বসে। বেশীরভাগ সময় বসে থাকছেন কেন? কাছে গিয়ে এমন কথা জিজ্ঞেস করতেই উত্তরে জানান, “উপরে দেখছেন না, কখন না ছাদ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে যায়। হাসপাতালের ছাদের এই অবস্থা দেখে কি নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকা যায়? এখান থেকে বের হতে পারলেই বাঁচি”।
পাশের ওয়ার্ডে পেটের পীড়া নিয়ে ভর্তি হওয়া রফিকুল ইসলাম (৫৫) নামে আরেক রোগী জানালেন, “ভাই এখানে এসেছি সুস্থ্য হতে। কিন্তু যেভাবে ছাদের পলেস্তার খুলে পড়ছে, তাতে কখন না মাথা ফেটে যায়-এই দুশ্চিন্তায় আছি, নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি না”।
তীব্র জ¦র নিয়ে শিশু সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করা নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ছাদের যা অবস্থা, হাসপাতালের বিছানায় সমসময়ই মেয়ের পাশে থাকছি। ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন রুবিনা বেগম বলেন, আমার মা এখানে ভর্তি আছেন। হঠাৎ ছাদের পলেস্তরা ভেঙে পড়ে মাথায় লাগলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এখন আর রোগীকে এখানে রাখতে ভয় পাচ্ছি।
এই চিত্র দিনাজপুরের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনরা জানান, ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ায় তারা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। কেউ কেউ রোগীকে আর হাসপাতালে না রাখার কথাও ভাবছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, আমরাও ভয়ের মধ্যে কাজ করছি। অনেক জায়গায় ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শুধুমাত্র হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের এই জরাজীর্ণ অবস্থায় নয়, বীরগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র এই হাসপাতালটি চলছে স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ১৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। এতে সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
জরাজীর্ণ ভবনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আফরোজ সুলতানা বলেন, হাসপাতালের ভবনটি অনেক পুরনো। ছাদের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। প্রকৌশল বিভাগকে ইতিমধ্যেই ৫ বার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে এবং মৌখিকভাবেও বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ১৭ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। জেলা শহর থেকে দুরে হওয়ায় এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন এবং বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক স্বল্পতার কারনে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হয়। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।