কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল গুলোতে কাশফুলের  নরম ছোয়ায় দর্শনার্থীদের ভীড় লক্ষনীয়

2025-09-28 23:16:09

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল গুলোতে কাশফুলের বাগান দেখতে ভীড় দর্শনার্থীরা। নদীর কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কাশফুলে বেড়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ। ধরলা তিস্তা ব্রহ্মপুত্র দুধকুমার সহ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬ টি নদ-নদীর অববাহিকার ৫শতাধীক চরাঞ্চলে এখন এই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। 

কবি নির্মলেন্দু গুণ এর ইচ্ছা করে ডেকে বলি, “ওগো কাশের মেয়ে,আজকে আমার দেখা জুড়ালো,তোমার হাতে বন্দী আমার প্রেম কাশ-তাই আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস।“

কাশফুল মানেই মেঘলা আকাশ,হালকা বাতাস আর কিছু না বলা আবেগটা শুধু হৃদয়ই বোঝে,ভাষা নয়। কাশফুলের সাদা সৌন্দর্যে লুকিয়ে থাকে এক নিঃশব্দ প্রেম,যেন প্রকৃতি নিজেই একটা কবিতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরৎ মানেই কাশফুলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। দিগন্ত জোড়া সাদা ফুলের এই মেলা যেন প্রকৃতির এক অমূল্য উপহার। কাশফুলের স্নিগ্ধ পরশ আর নির্মল বাতাস এই দুটোই যথেষ্ট মনকে সতেজ করে তোলার জন্য। শরৎ সত্যিই অসাধারণ! কাশফুল তৃণভূমির নির্মল সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় প্রকৃতির সবচেয়ে কোমল স্পর্শ, কাশফুলের সৌন্দর্য।

সরেজমিন দেখা যায় নুসরাত কয়েকজন বন্ধু মিলে ধরলা ব্রিজের কাছেই চরে এসেছেন। এসময় কথা হয় হায়দার আলীর সাথে তিনি পরিবার নিয়ে এসেছেন। তার সবাই আনন্দে উদ্বেলিত প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরে।

বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকই ভিড় জমাচ্ছেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নৌকায় ঘুরে বেড়ানো,কেউ সেলফি তুলছে, কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ সময়টি নিজেদের মতো করে উপভোগ করছেন।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন কাশফুলের বন। দিগন্ত জুড়ে কাশফুল আর কাশফুল। বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের সৌন্দর্য যে কারও মনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া।

কাশফুলের মাঝে বেড়াতে আসা পরিবার নিয়ে শরতের রঙে সেজে এসেছেন কেউ কেউ হাওয়ায় দুলছে, নেচে উঠছে কাশফুল। এর মধ্যে শিশুর ছবি তুলে দিচ্ছেন অভিভাবক। কাশফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ সবাই । কেউ আবার দু-চারটা কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পরিবারটি সুন্দর মুহূর্তটিকে ধরে রাখছে ছবিতে শুভ্র এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যান অনেকে।

লেখক আব্দুল খালেক ফারুক বলেন পর্যটনে নদী মাতৃক কুড়িগ্রামের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা। তিনি সৌন্দর্যের মায়ায় অভিভূত হয়ে বর্ননায় বলেন, ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। আর এর মধ্যে নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরের যেদিকেই চোখ যায়, শুধু শুভ্র রঙের খেলা। প্রকৃতির দানে চরের মাটিতে ঘন হয়ে জন্ম নেওয়া কাশবনের কারণেই এমন সৌন্দর্য। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ। হঠাৎ মনে হবে, সেখানে সাদা চাদর বিছানো। দোল খাওয়া কাশফুলের এই সৌন্দর্য যে কারও মনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। তাই দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ধরলা,তিস্তা,দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর প্রায় ৫শতাধিক চরাঞ্চলে।

সড়ক যোগাযোগ না থাকায় কাশফুল দেখতে নৌকায় করে নদী পার হয়ে যেতে হয় কাশবনে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী বেড়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ। বিনা চাষে প্রাকৃতিকভাবে হওয়া এসব কাশ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চরের মানুষ।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দীন বলেন, দেশের বৃহৎ নদীমাতৃক জেলা কুড়িগ্রামে বছরে প্রায় ৩/৫ কোটি টাকার কাশিয়া বা কাশ বিক্রি হয়ে আসছে। পরিবেশ বান্ধব কাশফুল দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদা থাকায় এটি বাণিজ্যিক ভাবে প্রসারের জন্য উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সাথে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা রাখবে। তাই জেলার নদনদী শাসন করার উপর গুরুত্ব দেন এই পরিবেশবিদ।