নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে সিটি কর্পোরেশনেনিয়েনির্যাতন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা এবং মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর এবং হেনস্থারমামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে মিট দ্যা জেলা প্রশাসক কর্মসূচি পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় জড়িত এবং ইন্ধনদাতারা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। মঙ্গলবার একই দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে সাথে একই কর্মসুচি পালন করবেন সাংবাদিকরা।
সোমবার ( ২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান স্বপন চৌধুরী, রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু, আরপিইউজে ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি শফিউল করিম শফিক,মাহমুদুল হাসান, নুর ইসলাম চান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল শাহীন, আরপিইউজে সাংগঠনিক সম্পাদক বাদশা ওসমানি, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ জীবন, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শরীফা বেগম শিউলি ও সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন চৌধুরী রাসেল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রকি, রংপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক আতিক হাসান ও সদস্য সচিব ফেরদৌস জয় প্রমুখ। এসময় রংপুরের শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
মিট দ্যা ডিসি কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা দেয়া হয়েছে। ঘটনার আট দিন হলেও মাত্র ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজনকে আইওয়াশ বদলি করা হয়েছে সিটি করপোরেশন থেকে। অন্য আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মব তৈরির চেস্টা করছে। ফেসবুকে লাইভ করছে। কর্মূসচির নামে মানববন্ধনে দাড়িয়ে সাংবাদিকদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে আসামীরা। মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং বিষোদাগার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক নাগরিকদের জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া এবং নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠনের কোন খবর নাই। মাত্র ৪ জনকে আইওয়াশ বদলি করে দায় সেরেছে সিটি করপেোরেশন। এসব ঘটনার ব্যবস্থা ৭ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান দেখতে চান সাংবাদিক নেতারা।
এসময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা জানান পুলিশ কমিশনারকে। সেই অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশ কমিশনার ও ২৯ সেপ্টেম্বর ডিসির সাথে সাথে বৈঠক হয়। আগামী৩০ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার, ১ অক্টোবর ডিআইজি ও র্যাব-১৩ সিও, ৪ অক্টোবর সেনাক্যাম্প ইনচার্জের সাথে সাক্ষাত, ৫ ও ৬ অক্টোবর সকল রাজনৈতিকদল, পেশাজীবি ও সুশীল সমাজের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে গণসংযোগ এবং ৭ অক্টোবর দাবি আদায়ে প্রেসক্লাব চত্বরে বেলা ১১ টায় সংহতি সমাবেশ হবে
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক জানান, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেঠে তা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামীসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে প্রচেস্টা চালাচ্ছে পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আপটেড নিচ্ছি। তদন্ত কমিটি গঠন এবং জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত: গেলো ২১ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদলকে কাচারী বাজার থেকে জুলাই রাজবন্দির পরিচয়ে রকি নামের এক যুবকের নেতৃত্বে অপহরণ করে নিয়ে সিটি করপোরেশনেরে এনে নির্যাতন করা হয়। পরে নতুন ভবনের দোতলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজের জন্য ক্ষমতা চাইতে বাধ্য করার চেস্টা করা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ছুটে গেলে সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধোর ও হেনস্তা করেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক বাদল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময় কুমার সরকারসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সাংবাদিকরা।
এ ঘটনায় জড়িত রতন ও সাগর নামের দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রতন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বদলি করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চারজনকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। জড়িত সিটি করপোরেশনের অপর কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো সরকারি চাকরি বিধিমালা ভেঙ্গে নগরবাসিকে জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া ও হুমকি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
গত ১৭ ই সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদে " রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয় তারা " শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।