ডোমার নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডোমার উপজেলা শহর থেকে বসুনিয়ার হাট সাত কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও।সংষ্কার কাজ শুরু করে তিন বছর আগে কাজ ফেলে চলে যায় ঠিকাদারএরপর দীর্ঘ সময়েও ওই ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল কিংবা নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জটিলতায় ভাংগা সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সংস্কার কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কটির কিছু অংশের পাকা স্তর ভেঙে রেখে কাজ বন্ধ করে চলে যায়।
এলাকাবাসীর দাবি, কাজ শুরুর আগে কষ্ট হলেও সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যেত,এরপর ভেঙে রাখার কারণে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে, সড়কের যে অংশ ভালো ছিল সেটি ভেঙে রেখেছে অপরদিকে খারাপ অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে,ফলে এখন বিভিন্ন যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা রকমের দূর্ঘটনা।
সড়কটির গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আনছারুল ইসলাম (৫০) বলেন,‘বসুনিয়ার হাট উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র।বিভিন্ন কৃষি পণ্যসহ গরু, ছাগল ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন এ হাটে,উপজেলা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার ভাংগা সড়কের কারণে বিপাকে পড়েছেন দূরদুরান্তের ব্যবসায়ীরা। মালামাল পরিবহনের সমস্যায় কমেছে ব্যবসায়ীদের আগমন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষক, অপরদিকে এ পথে প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করেন।এলাকার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়ার জন্য বাড়ি থেকে যাতায়াত করে ডোমার ও নীলফামারী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সড়কটির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সকলে’।
তিনি বলেন,চার বছর আগে প্রায় ২১কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরুহয় সড়কটিরএর কিছুদিনের মধ্যে কাজ বন্ধ করে সকল সরঞ্জাম নিয়ে সটকে পড়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।আগে ভাংগা সড়কে ধুলাবালি হতো, এখন বৃষ্টির সময় ভরেছে কাদা পানিতে,এতে করে এলাকার জাল্লির মোড় থেকে ডোমার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে’।
ডোমার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম চিকনমাটি গ্রামের জাফর আলী (৫০) বলেন, ‘কাজ শুরুর আগে কষ্ট হলেও সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যেত। ঠিকাদার কাজ ফেলে রাখায় সম্পূর্ণ সড়ক চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে’।
তিনি জানান, ওই সড়কের ভালো অংশের দিকে ভেংগে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিলেন। এখন কাজ ফেলে রাখায় সম্পূর্ণ সড়কে চলাচল করা যাচ্ছে না।
ওই এলাকার জাল্লির মোড়ের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী (৫০) বলেন, ‘চাইর বছর থাকি রাস্তাটা ভাঙি পড়ি আছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করির এক বছর পর থুইয়া পালাইল। এর পর থাকি আর কোন খোঁজ খবর নাই’।
ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ওই সড়ক সংষ্কারে ২০২১ সালে দরপত্র আহবান করা হয়। যার প্রক্কলন ব্যয় ধরা ছিল ২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এণ্টারপ্রাইজ এ- ইউনিক কনস্ট্রাাকশন জেভি। ২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি করতে তারা চুক্তিবদ্ধ হন। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৪ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে কাজ বন্ধ রাখেন।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. নিজাম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম বলেন, ‘আগের ঠিকাদার কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমরা তার চুক্তি বাতিল করেছি। নতুন করে দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে’।
নীলফামারীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হাসান বলেন, ‘পূর্বের ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ওই সড়কের কাজটি করতে আমরা দরপত্র আহবানের অনুমতি পেয়েছি যেহেতু ওই পথে চলাচলকারী মানুষ সাফার করছে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করবো’। কাজটি সম্পন্ন করতে ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানান তিনি।