ফুলবাড়ীতে ৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

2025-10-10 02:38:26

আঞ্চলিক প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। এটি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা খন্দকারপাড়া সরকারী বিদ্যালয় নামে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে সকাল ১১ টায় দেখা ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ৮ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাশ নিচ্ছেন মোঃ মিলন ইসলাম ও নুর নাহার বেগম নামের দুই সহকারী শিক্ষক। বারান্দায় পায়চারী করছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান খন্দকার। বিদ্যালয়টিতে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তা নেই। পাশেই অন্যের বাড়ীর উঠান দিয়ে প্রবেশ করতে হবে বিদ্যালয়টিতে। দুই শিপ্টে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হলেও সেখানে কোন নিয়ম শৃংখলা আছে-এমনটি মনে হয়নি। অফিসের ছাত্র হাজিরা খাতা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক ক্লাশে ৯ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত রয়েছে ৮ জন, ১ম শ্রেণীতে হাজিরা খাতায় ৫জন, ২য় শ্রেনীতে ৮ জন ও ৩য় শ্রেনীতে ৪ জন লিপিবদ্ধ থাকলেও ক্লাশে একজনকেও পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে ৪র্থ শ্রেনীতে ৬ জন শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও উপস্থিত রয়েছে ৫ জন। আবার ৫ শ্রেনীতে ছাত্রছাত্রী হাজিরা খাতায় ৫ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও উপস্থিত রয়েছে আছিয়া খাতুন নামের একজন শিক্ষার্থী। এভাবেই শিক্ষার্থী না থাকায় চলছে কুরুষাফেরুষা খন্দকারপাড়া সরকারী বিদ্যালয়।

স্থানীয় অনেকে জানালেন, কেন এই বিদ্যালয়টি চালু রাখা হয়েছে। এখানেতো ছাত্রছাত্রী নেই। একটা গ্রামে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে এটি চলবে কিভাবে। তাছাড়া ওই বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তাঘাট নেই। বর্ষাদিন আসলেতো কেউএ যায় না সেখানে। মনে হয় বিদ্যালয়টির খোজ খবর কেউ রাখেই না।

৫ম শ্রেনীর একমাত্র শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন জানায়, আমি প্রতিদিন আসি ক্লাশ শেষ করে বাড়ীতে ফিরি। আমার ক্লাশে আমি একাই। কেউ এই স্কুলে আসে না। কারন রাস্তাঘাট নেই। নেই কোন খেলার মাঠ বিনোদনের জিনিসপত্র।

সহকারী শিক্ষক মোঃ মিলন ইসলাম জানালেন, এলাকাটি গরীব। সবাই কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ফলে তাদের সন্তানেরা তাদের সঙ্গেই থাকে। তাছাড়া তিনি তার বিদ্যালয়ের পাশাপাশি আরও ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় তার বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী না থাকার বিষয়টি জানান।

প্রধান শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয়টি চলার মত আসলেই সেই পরিমান ছাত্রছাত্রী নেই। আমরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশও করেছি। কোন লাভ হয় নি। বিদ্যালয়ে সব শ্রেনী মিলে ৩৭ শিক্ষার্থী থাকলে উপস্থিত থাকে মাত্র ৬ জন। আমাদের করার কি আছে। আমরাতো সরকারী সব আদেশ মেনে চাকুরী করতে এসেছি। তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন-দেখেন, আমি প্রতিদিন আইলের উপর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসি। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার মত কোন রাস্তা আছে ?

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ ইয়াছিন আলী যুগান্তরকে জানালেন, বিদ্যালয়টির ক্যাচমেন্ট এলাকায় জন বসতি কম থাকায় এবং যাতায়তে সুগম ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী কমে গেছে। ফলে বিষয়টি আমরা উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তিবে বিধি মেতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।