৩৫ বছর পর রাবিতে রাকসু নির্বাচনের উৎসব: প্রচারণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস

2025-10-13 22:02:22

রাবি সংবাদদাতা:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন যেন এক উৎসবের নগরী। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস মুখরিত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণায় সরগরম একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, টিএসসিসি, চারুকলা চত্বর, ক্যাম্পাসের প্রতিটি আড্ডাস্থল। প্রার্থীরা দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে—হাসিমুখে কুশল বিনিময়, লিফলেট বিতরণ আর ভোটের আহ্বান।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানোর সুযোগ থাকায় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন ব্যস্ততার চূড়ান্ত রূপ। পূনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা, আর ভোটগ্রহণ হবে ১৬ অক্টোবর।

শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে এবার প্রার্থীরা ব্যবহার করছেন আধুনিক কৌশল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানা রঙিন ও অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও, স্লোগান, এমনকি ছোট্ট গানও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম এলাকায় নবীনবরণ অনুষ্ঠানের দিন প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে—কেউ লিফলেট দিচ্ছেন, কেউ আবার হাসিমুখে নতুন ভোটারদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ ও ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’—ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাকে দেখা গেছে আমতলা, রবীন্দ্রনাথ ভবনের সামনে ও টুকিটাকি চত্বরে প্রচারণা চালাতে। ভিপি পদে একই প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রচারণা করেছেন শহীদ মিনার, চারুকলা ও বিজ্ঞান ভবনের সামনে সবাই সমান তালে মাঠে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সিদ্দিকী রিমি বলেন, “আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের সময় রাকসু হচ্ছে। এতদিন বইয়ে পড়েছি রাকসুর ইতিহাস—আজ নিজের চোখে দেখছি। উৎসবমুখর এই পরিবেশে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া দারুণ লাগছে।”

‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছর পর শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রথম ভোট দেবে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আনন্দ। আবাসনসংকট রাবির সবচেয়ে বড় সমস্যা; নির্বাচিত হলে পূর্ণাঙ্গ আবাসন ও অনাবাসিকদের জন্য ভাতা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার।”

‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’-এর ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “প্রচারণা শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলেছি, তারা এবার সেই প্রচেষ্টার মূল্য দেবে বলেই আশা করি।”

ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, “আমাদের প্যানেলে বৈচিত্র্য আছে, তাই শিক্ষার্থীদের সাড়া অসাধারণ। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আসছে উৎসাহ নিয়ে—কারণ তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম।”

উল্লেখ্য, এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী।

এর মধ্যে— ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন, এজিএস পদে ১৬ জন, সিনেট প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন, আর ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হল সংসদ নির্বাচনে।

মোট ভোটার ২৮,৯০১ জন, এর মধ্যে নারী ১১,৩০৫ ও পুরুষ ১৭,৫৯৬ জন। ভোটগ্রহণ শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।