রাবির ইতিহাস বিভাগে নিষিদ্ধ দুই ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রী নিয়োগের অভিযোগ

2025-10-13 23:21:14

রাবি সংবাদদাতা:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুই ছাত্রলীগের নেতার স্ত্রী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগ বোর্ডের প্রার্থীরা। বুধবার (৮ই অক্টোবর) অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডে ৭ জনের মধ্যে দুই ছাত্রলীগের নেতার স্ত্রী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুপারিশপ্রাপ্ত মোছা. আদিলা আক্তার নিপা হলেন সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আহমেদ সাগরের স্ত্রী। তিনি নিজেও ছাত্রলীগ কর্মী এবং ইতিহাস বিভাগের আওয়ামী লীগের শিক্ষক ড. আবুল কাশেমের ফেলো ছিলেন। এছাড়াও আদিলা আক্তার নিপা নিয়োগ পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন বলে গুঞ্জরন শোনা যাচ্ছে।

এছাড়াও সুপারিশ পাওয়া আরেকজন হলেন হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ নেতা শিহাব জহুরীর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন লাবনী। তিনিও

জুলাই পক্ষের শক্তিদের

নির্যাতনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নিজ এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে তাদের পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত।

এদিকে নিয়োগ বোর্ড হওয়ার আগে "রাবির ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে তোলপাড়: এগিয়ে ছাত্রলীগের ডজনখানেক প্রার্থী" এমন শিরোনামে দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এমন দুজনকেই শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই অন্দোলনে ছাত্রদের পাশে দাড়ানোর কৃতিত্বকে ধারণ করে উপাচার্য হওয়া সালেহ্ হাসান নকিব একের পর এক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের পরিজনকে নিয়োগ দিয়েই চলছেন। ছাত্রজনতার অগণিত শাহাদাত ও রক্তের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিপ্লবের ফলাফল কী এভাবেই ছাত্রলীগের সদস্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ভুলুণ্ঠিত হবে? আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন জুলাই বিপ্লবের আর এক সুবিধাভোগী শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ। আমরা এমন ভুঁইফোঁড় নিয়োগ মানিনা বলে জানা তিনি।

ইতিহাস বিভাগের  ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ বাদশা বলেন, আওয়ামী শাসন আমলে ভিন্নমতের কোন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হলে তাকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে দলীয় প্রশ্নে জর্জরিত করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে বোর্ড থেকে চলে যেতে বলা হতো। অথচ আজ জুলাই বিপ্লবের ধ্বজাধারী বর্তমান প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের চেতনার স্পন্দনকে ধারন করার পরিবর্তে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দল ভারী করেই চলেছেন। এ কাজে সর্বশেষ তাকে সহযোগিতা করেছেন ইতিহাস বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. শেরেজ্জামান। এমন নিয়োগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি এ প্রসঙ্গে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ শেরেজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, শিবির ও অন্য দলের পার্থক্য তিনি বুঝেন না। নিয়োগ বোর্ডের আগেও ছাত্রলীগের প্রার্থীদের দলীয় পদ ও পরিচয় তুলে ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে এসব আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে বর্তমান প্রশাসন জুলাই আদর্শের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম বলতে অনিচ্ছুক ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের একজন প্রার্থী বলেন, ২০১৮ সালের ইতিহাস বিভাগের ভাইভা বোর্ডের সময় তৎকালীন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ১নম্বর প্রার্থী ছিলেন এই ফাহিমা খাতুন লাবনী। ছাত্রলীগ নেতা শিহাব জহুরী ছাত্রলীগের মাধ্যমে চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সাথে সে সময় নিয়োগের সেটিং করেছিলো। এবারও প্রশাসনের বিশেষ কেউ তার জন্য জোর সুপারিশ করেছে বলে গুঞ্জরণ উঠেছে । সিনেট ভবনের হলরুমে একই বেঞ্চে বসে লিখিত পরীক্ষা দেওয়া ফাহিমা খাতুন লাবনী ও আইনাল হক ভাইভায় অংশগ্রহণ ও শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ পাওয়ার বিষয়টি কাকতালীয়, না বিশেষ প্ল্যানের অংশ কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে অনেকে মনে করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: শেরেজ্জামানকে  একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “এই বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করা সমীচীন মনে করছি না। আগামীকাল সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হবে; সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”

উল্লেখ্য, এর আগেও উপাচার্য ফলিত রসায়ন বিভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ উপজেলার জাসদ ছাত্রলীগ ( ইনু গ্রুপ) নেতা নুরুজ্জামানকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।