মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
গিরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে লামিয়া আক্তার সেবিন। তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এ কারণে সে ১৮ দিন ধরে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তার ছোট ভাই রাইয়ান তামিমও ওই বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণীতে পড়ত। কিন্তু সেও বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা। শুধু এই দু'শিক্ষার্থী নয়। তাদের ৩ পরিবারের আরও ৭ সদস্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও হামলা ও মারপিটের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ওই পরিবারগুলো। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের গিরাই পানাতিপাড়া গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রফিক মিয়া ও তার দু ছেলের পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামবাসীর একাংশ। তারা ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। মুলত. অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাদের। ইতোপূর্বে তাদের উপর হামলা ও মারপিট চালানো হয়েছিল। নানা অজুহাতে তাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে একঘরে হওয়া পরিবারের কর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান।
তিনি বলেন, আমার প্রতিবেশিদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ছিল। তারই সুত্র ধরে তারা আমাদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন করছেন। প্রায় ১৮ দিন হলো সমাজের একাংশের লোকজন আমাদের একঘরে করে রেখেছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারিনা। তারা রাস্তায় মারপিট ও হামলা করে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছেনা।
আরেক পরিবারের কর্তা আলমগীর মিয়া বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা অনেক মানুষ। হামলা ও মারপিট করে।
ওই পরিবারের সদস্য তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার সেবিন বলেন, আমি স্কুলে যেতে পারছিনা। রাস্তা দিয়ে গেলে তারা মারপিট করে। ভয়ে বাড়ির বাহিরে বের হতে পারছিনা। আমি স্কুলে যেতে চাই।
কান্না জড়িত কন্ঠে জরিনা বেগম (৫৫) বলেন, আমাদের বাড়িতে মানুষ কম। তারা হামলা-মারপিট করে, রাস্তায় বের হতে দেয় না। ছেলেরা কাজকর্ম করতে পারছেনা। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৩ পরিবারের সাথে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে প্রতিবেশি কয়েকটি পরিবারের। এ ঘটনায় একাধিকবার হামলা, মারপিট ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি গিরাই গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী মৌখিক ভাবে ওই ৩ পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন। প্রভাবশালীর একজন গিরাই বাজার জামে মসজিদের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ ইসা মিয়া বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশিরা আমাদের মসজিদে অভিযোগ দিল যে, সে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছে। আমরা মসজিদের ৩ জন মানুষ বিষয়টি তদন্ত করলাম। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়। আমরা তাকে (জাহাঙ্গীর) মসজিদে ডাকলাম। সে বলল প্রতিবেশিরা হুমকিতে রাস্তা দিয়ে বের হতে পারছেনা। প্রতিবেশিরা মারপিট করে। আমরা তাকে বাড়ি হতে নিয়ে এসে আবার বাড়িতে রেখে আসতে চাইলাম। তারপরও ভয়ে সে ৫ জুম্মা মসজিদে আসেনি। একারণে সমাজের লোকেরা তাদের ৩ পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে।
আরেক প্রভাবশালী আলমগীর মিয়া বলেন, প্রতিবেশির অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকজন তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তারা ভয়ে বাড়ি থেক বের হতে পারছেন না-বলেছেন। কমিটির লোকজন তাদের মসজিদে ডেকে এসেছিলেন। কিন্তু তারা ৫ জুম্মা মসজিদে আসেননি। একারণে সমাজের লোকজন তাদেরকে একঘরে করে রেখেছেন।
ওই ৩ পরিবারের বিরুদ্ধে মসজিদে অভিযোগকারী প্রতিবেশিদের মধ্যে জুয়েল রানা, রুস্তম আলী, আব্দুর রউফসহ কয়েকটি পরিবার রয়েছে। তারা জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩ পরিবারকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। কয়েকদফা হামলা ও মারপিটেরও ঘটনা ঘটিয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসাতে তারা মসজিদে শালিস দিয়েছিল বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসী জানান।
গিরাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলনুর হোসেন বলেন, ওই শিক্ষার্থী কয়েকদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছেনা। একঘরে করার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি কালকেই ওকে স্কুলে নিয়ে আসব।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লা বলেন, ঘটনাটি জানিনা। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।