রংপুর রেলওয়ে স্টেশনঃ:দেড়শ বছরেও নেই উন্নয়নের ছোঁয়া

2025-11-02 10:42:57

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো রেল স্টেশন যা ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, দেড়শ বছড়ের পুরোনো হলেও রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়ন কাজ হয়েছিল ১৯৪৪ সালে এরপর বাহ্যিক কিছু উন্নয়ন হলেও কার্যক্রমের কোন উন্নয়ন হয়নি। উল্লেথ্য-এখানে বাহ্যিক উন্নয়ন বলতে প্লাটফর্ম একটু বড় হয়েছে, প্লাটফর্মে কিছু বসার চেয়ার, গরমের জন্য কিছু ফ্যান লাগানো হয়েছে।

বর্তমানে বিভাগীয় রেল স্টেশন যার চাহিদা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রেলযাত্রায় বাড়েনি যাত্রীর সংখ্যা। এ কারণে নিত্যদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারন যাত্রীরা। রংপুর জেলার মানুষের কাছে ট্রেনের টিকিট এখন যেন সোনার হরিণ। যাত্রী চাহিদার ১৫-২০ ভাগ টিকিটও দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। অনলাইন ও কাউন্টার দুই মাধ্যমেই টিকিট পেতে হয় যুদ্ধ করতে হয় যাত্রীদের। রংপুর থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস। এ ছাড়াও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস যাত্রাবিরতি দেয় রংপুরে। প্রতিদিন রংপুর ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ২টি মিলে গড়ে সাড়ে ৬শ যাত্রী বহন করে। তার মধ্যে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে রংপুরের জন্য আসন বরাদ্দ মাত্র ১৫৪টি ও রংপুর এক্সপ্রেসে বরাদ্দ ১৯৯টি। দুটি ট্রেনেই টিকিট পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

যাত্রীরা বলছেন, চাহিদার ২০ ভাগ টিকিটও দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এতে করে দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। সমস্যা সমাধানে ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের।

রংপুর থেকে রেলপথে ঢাকায় যাবেন নগরীর লালবাগের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া। তাই টিকিট কাটতে এসেছেন তিনি রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ষাটোর্ধ্ব এই রেলযাত্রী বলেন, ট্রেনে যাতায়াত করতে ভালো লাগে তাই আমরা কষ্ট করা লাগলেও এখানে আসি আজ আমি টিকিট কাটতে স্টেশনে আসছি। কাউন্টারে এলে বলে কোনো টিকিট নাই, অনলাইনে কাটেন। অনলাইন প্রসঙ্গে এতোটা না বুঝলেও কাটতে হয়, সেখানেও আবার অনেক ভেজাল। স্থানীয় বাসিন্দা টিটু মিয়া বলেন, বিভাগীয় স্টেশন আছে। কিন্তু এখানে কোনো বিভাগীয় কার্যক্রম নেই। আরও একটি ট্রেন বাড়িয়ে ও কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু করলে খুব ভাল হবে। নয়তো এই ভোগান্তি থেকেই যাবে।

মুনমুন রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, কাউন্টারে টিকিট পেতে কষ্ট করতে হয়। অনলাইনে তো সমস্যার শেষ নেই। আমরা বারবার শুনি, রংপুর রেল স্টেশনের উন্নয়ন হবে, ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু অজানা কারণে আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছি।

ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতে নানা ভোগান্তি। আগেই বুকিং হয়ে যায়, নয়তো সিন্ডিকেট করে কেটে রাখে। কখনো কখনো নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছি না। রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের নানা দাবি থাকা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অত্যন্ত হতাশাজনক।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে বলছেন, দেশ যখন মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে, তখন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় শহর রংপুরের রেলসেবা সীমাহীন দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে আছে। ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থার অবসান দরকার।

রংপুর বিভাগ উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ওয়াদুদ আলী বলেন, ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে একবার মাত্র দায়সারাভাবে উন্নয়ন কাজ হয়েছিল ১৯৪৪ সালে। এরপর ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিভাগীয় শহর হিসেবে রংপুরের এই স্টেশনটির বাহ্যিক কিছু ছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব পলাশ কান্তি নাগ বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা মনে করি যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য রেলকে ঢেলে সাজানো উচিত। তিনি আরও বলেন, উত্তরের কোটি মানুষের ট্রেন যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রংপুর। অন্য লাইনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন স্থাপন হলেও রংপুর সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা আর বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকতে চাই না। দ্রুত রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের সংস্কার করে আধুনিকায়ন করাসহ এই স্টেশনের ওপর দিয়ে নূন্যতম আরও দুটি আন্তঃনগর ট্রেন বরাদ্দ এখন সময়ের দাবি।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেলের টিকিট এখন অনলাইনেই কেটে নিতে হবে। ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট ১০ দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়। যেহেতু শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে সেখানে রংপুরবাসীর জন্য আলাদা করে করার কিছু নেই। আমরা সীট সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা হয়ত ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদের হাতে কিছু নেই।