ঘোড়াঘাটে বেওয়ারিস কুকুরের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি

2025-11-02 11:54:33

ঘোড়াঘাট প্রতিনিধিঃ

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে হঠাৎ করেই বেওয়ারিস কুকুরের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে এলাকার জনসাধারণ বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ভীত অবস্থায় চলাফেরা করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার, বলাহার,ডুগডুগি বাজার, হরিপাড়া বাজার বলগাড়ী বাজার, ওসমানপুর, পৌর সভার

ও উপজেলার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র সহ আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলোতে প্রায়ই একসাথে ১৫ থেকে ২০ টি কুকুর দলবেঁধে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন মহল্লা, বাজার ও স্কুলের আশপাশে বেওয়ারিস কুকুরের বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে এই কুকুরগুলোর আক্রমণাত্মক আচরণে অনেকেই রাস্তায় চলাফেরায় ভীত হয়ে পড়েছেন। কিছু কিছু কুকুরকে দলবদ্ধ অবস্থায় হামলা চালাতেও দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ছদু মিয়া বলেন, “প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হলে কয়েকটা কুকুর ধাওয়া দেয়। কিছুদিন আগেই এক শিশুকে কামড়েছে বলেও শুনেছি।” এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত বেওয়ারিস কুকুর নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারাভিযান চালানো এবং কুকুরের জন্য নিরাপদ স্থান নির্ধারণ করা প্রয়োজন।ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরে কামড়ানো রোগির অভিভাবক উপজেলার কৃষ্ণরামপুর গ্রামের হবিবর বলেন, আমার সাত বছরের বাচ্চা বাড়ির বাইরে খেলার সময় কুকুর কামড় দেয়। হাসপাতালে আসছি কিন্তু শুনি ভ্যাকসিন নাই। বাধ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে ৪৮০ টাকায় ভ্যাকসিন কিনে দিয়ে নিলাম। আরও ৪ টা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার সামর্থ্য থাকলেও অনেকেই আছে যাদের সামর্থ্য নাই। তাদের জন্য অনেক কষ্টকর হবে ভ্যাকসিন কিনে এর ডোজ পুরা করা।পশুসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যাভাব ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবেই কুকুরগুলো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চলে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই কুকুর পালন করে পরবর্তীতে মালিকেরা ফেলে দেন, যার ফলে বেওয়ারিস কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। এই বেওয়ারিস কুকুরগুলো প্রায়ই আক্রমণাত্মক আচরণ করে থাকে। এ ধরনের বেওয়ারিস কুকুরদের মধ্যে অনেক সময় জলাতঙ্ক (রেবিস) ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও টিকা প্রদান ছাড়া এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আহসান হাবিব জানান, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে পাঁচ জন কুকুর বা বিড়াল কামড়ানো রুগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু গত এক বছর থেকে রেবিস ভ্যাকসিনের সরবরাহ নাই। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে তা ব্যবহার করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বারবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়ে আসছে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বেওয়ারিস কুকুরের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, পথচারী এবং সাইকেল বা মোটরসাইকেল চালকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। পৌরসভা এবং প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।