হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা):
সরকারিভাবে ২০ নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ হাসকিং চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংগ্রহ কার্যক্রমে অটো রাইস মিলই এখন প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একসময় উপজেলার ১২০টির বেশি হাসকিং চাতাল সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে প্রায় সবই অচল। খাদ্য দপ্তরের তালিকায় থাকা ৩৫টি চাতাল সচল আছে কি না সে তথ্যও নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি উপজেলা খাদ্য অফিস। চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য এখন নির্ভর করতে হচ্ছে একটি মাত্র অটো রাইস মিলের ওপর।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সংগ্রহ অভিযান। এ বছর সুন্দরগঞ্জ ও বামডাঙ্গা খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১১৬ মেট্রিক টন এবং ধান ২৯৭ মেট্রিক টন। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ধান কেনা হবে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা এবং চাল ৫০ টাকা।
চাতাল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি শাহাদত হোসেন আনন্দ বলেন, বরাদ্দ বৈষম্য, পুঁজি সংকট এবং ব্যাংক ঋণের চাপের কারণে অনেক চাতাল মালিক দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। ফলে চাতাল ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “বরাদ্দ নিয়ে বৈষম্য তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।”
তারাপুর ইউনিয়নের ‘হক চাল কল’ এবং ‘নাজমা চাল কল’-এর মালিক শামসুল হক জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে কোনো সরকারি বরাদ্দ না পেয়ে তিনি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “সব জায়গায় সিন্ডিকেট। বরাদ্দ না পাওয়ায় ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েছে। তাই চাতাল বন্ধ করেছি।”
চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শ্রমিকরাও। পাঁচ বছর ধরে চাতালের কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হওয়া শ্রমিক আমেনা বেগম বলেন, চাতাল বন্ধ হওয়ায় রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করছি।
ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছেন অনেক চাতাল ব্যবসায়ী জানান, সোনালী ব্যাংক পিএলসি সুন্দরগঞ্জ শাখার ম্যানেজার আব্দুল হাদী। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন লেনদেন না থাকায় অনেক সিসি লোন গ্রাহক খেলাপি হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
হোপ-এ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, হাসকিং চাতাল ব্যবসা অচল হয়ে পড়ায় সরকার এখন অটো রাইস মিলের ওপরই নির্ভর করে ধান-চাল সংগ্রহ করছে। হাসকিং চাতাল মালিকদের অধিকাংশ পুঁজির অভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারছেন না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বপন কুমার দে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কৃষকরা ধান সরবরাহের সুযোগ পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে অনেক কৃষকই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। হাসকিং চাতালগুলো বন্ধ থাকায় সংগ্রহের জন্য অটো মিলই একমাত্র বিকল্প হয়ে গেছে।