মানজুরুল ইসলাম, লালমনিরহাট (কালীগঞ্জ):
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় চাহিদামতো সার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষকেরা লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে হতীবান্ধা উপজেলা অডিটরিয়াম চত্বর এলাকায় ‘মেসার্স মোর্শেদ সার ঘর’-এর সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, লালমনিরহাটের ব্র্যান্ডিং পন্য ভুট্টা। সেই ভুট্টা চাষাবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলার সব চেয়ে বেশি ভুট্টার চাষাবাদ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। ভুট্টা চাষের শুরুতেই সার সংকটের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে বিএডিসি ও বিসিআইসি'র পরিবেশক মেসার্স মোর্শেদ সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা সার পাচ্ছিলেন না। বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে রোববার সকালে সিংগিমারী ইউনিয়নের চাষিদের নিকট সার বিক্রি করা হবে।
এ প্রচারনা শুনে উপজেলার সিংগিমারী ইউনিয়নের কৃষকেরা সকালে সেখানে ভিড় জমান। মুহুর্তে সার ক্রেতার দীর্ঘ লাইন হয় ওই বিক্রয় পয়েন্টে। কিন্তু কয়েকজন কৃষককে তাদের চাহিদামতো সার না দিয়ে হঠাৎ বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কার্তিক বর্মনের সহযোগিতায় পরিবেশক সারগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রি করেন বলে অভিযোগ উঠে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে পরিবেশক ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসরন দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
কৃষকদের ঘন্টা ব্যাপী অবরোধে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শামীম মিঞা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম ও জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের ৩ বিঘা জমির জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োজন। কয়েক দিন ধরে ঘুরেও তিনি সার পাননি। রোববার সকালে সার পাওয়া যাবে শুনে গেলেও চাহিদামতো সার না থাকায় ফিরে আসতে হয়। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষকদের সার না দিয়ে বেশি দামে সার খুচরা ও কালো বাজারে বিক্রি করছেন ডিলাররা। দুর্নীতিবাজ ডিলার ও কৃষিকর্মকর্তাদের অপসরন দাবি করেন তারা।
আরেক কৃষক কসমত আলী বলেন, ভুট্টা খেতে এখনই সার দেওয়ার সময় আজ কালকের মধ্যে সার না পেলে ভুট্টা রোপণই সম্ভব হবে না। আমার মতো অনেক কৃষকই সার পাচ্ছেন না। এবারে ভুট্টার আবাদ কি হবে আল্লায় জানে।
মেসার্স মোর্শেদ সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর মোর্শেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শাইখুল আরেফিন বলেন, জেলায় সারের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মাসের শেষ দিন তাই এমনটা হতে পারে। একদিন পরেই নতুন মাসের অধিক বরাদ্ধের সার আসছে। সুতরাং কোন সংকট নেই এবং সংকট থাকবেও না। কিছু মানুষ ডিলারের প্রতি ব্যাক্তিগত প্রতিশোধ নিতে বা তার ডিলার পয়েন্ট বাতিল করতে এমনটা করতে পারে বলেও তথ্য রয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, সারের মজুদ ও বিক্রির হিসাব নেয়া হচ্ছে। হিসাবের গড়মিল পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত কৃষকদের শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।