শ্রদ্ধা, স্মৃতি ও প্রত্যয়ে রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন

2025-12-15 17:53:18

রাবি সংবাদদাতা:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।

সকাল ৮টায় সিনেট ভবন চত্বর থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়, যা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, সহায়ক কর্মচারী সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন, পরিবহন টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি, স্কুল ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে সকাল সোয়া ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণা, সম্মাননা স্মারক প্রদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণ করে গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাতে হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড আমাদের হতভম্ব করে দেয়। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সারা দেশে প্রতিরোধের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়।”

মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাক বাহিনী রাবিতে প্রবেশ করে। তাদের সহযোগিতায় প্রথম শহীদ হন সুখরঞ্জন সমাদ্দার, এরপর শহীদ হন হবিবুর রহমান ও আবদুল কাইয়ুম। এই হত্যাকাণ্ড আমাদের দিশেহারা করে দেয়। তখনই আমি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দেশ স্বাধীন হলেও আমরা হারিয়েছি আমাদের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা বয়ান রয়েছে, তবে কোনো বয়ানই পূর্ণাঙ্গ সত্য নয়। স্বাধীনতার মূল সুর সর্বত্র এক—আত্মমর্যাদা, অধিকার, সুবিচার ও বৈষম্যহীনতা।”

তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো স্বাধীনতা সংগ্রামে মানুষের আকাঙ্ক্ষা একই। একাত্তরের শহীদদের যেমন এই আকাঙ্ক্ষা ছিল, তেমনি আজও মানুষের চাওয়া একই।”

সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহা. মাইন উদ্দিন বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হান আমাদের ফেনী জেলার মানুষ ছিলেন। তাঁদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো আজও নানা বিতর্কে ঘেরা। এসব ঐতিহাসিক সত্যের সুষ্ঠু ও স্পষ্ট সমাধান প্রয়োজন।”

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহাবুবুর রহমান, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।