নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে পুরো অঞ্চলজুড়ে হাঁড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিভাগ, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬ টা পর্যন্ত নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ব তাপমাত্রা রেকোর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১২ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১১ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং গাইবান্ধায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর বিভাগের রংপুরসহ পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধা জেলায় দিন দিন শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে সকালে ঘর থেকে বের হওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মজীবী মানুষ, বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের আয় উল্যেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। উত্তর হিমালয় পাদদেশ থেকে বয়ে আসা হিমশীতল বাতাস, কুয়াশা আর শীতের তীব্রতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ।
এই শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এই অঞ্চলে নভেম্বরের শুরু থেকেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে জলবায়ু পরির্বতনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে শীতের রূপ বদলে গেছে। ডিসেম্বরের শেষ প্রান্তে এসেও রংপুরে মিলছে না অতীতের মতো তীব্র শীত; শীতের আমেজে থাকলেও আশঙ্কাজনক হারে কমছে এর প্রকোপ ও স্থায়িত্ব। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়কে বছরে রংপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও অনেক এলাকায় যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। এতে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। বিশেষ করে ভোর ও সকাল বেলায় দৃশ্যমান কম থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে শীতের প্রভাবে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল গুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। শীত নিবারণের জন্য মানুষ ছুটছে গরম কাপড়ের দোকানে। ফুটপাত ও ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে নিম্নআয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এর পরও লাঙ্গল নিয়ে চাষিরা কনকনে শীতে জীবিকার তাগিদে জমিতে কাজ করছে।
স্থানীয় রিকশাচালক শামিম মিয়া বলেন, ‘দিনে যা আয় হয়, তাতে ঠিকমতো পরিবার নিয়ে খাওয়াই কষ্ট। নতুন শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। পুরনো একটা জ্যাকেট দিয়েই চলতে হচ্ছে।’ একই কথা দিনমজুর ও ভ্যান চালকদেরও।
অন্যদিকে কাপড় ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন, রুহুল আমিন জানান, এ বছর পুরো কাপড়ের পাইকারি দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। তাঁদের দাবি, পুরনো কাপড় আমদানির কোটা কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে, যা চাপ পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অনেক অতিদরিদ্র মানুষ। রাস্তায় বসবাসকারীরা খড়কুটো, কাঠ কিংবা পরিত্যক্ত কাগজ জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় বহু শ্রমজীবী মানুষের আয় আরো সংকুচিত হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে প্রকৃত তাপমাত্রা খুব কম না হলেও শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতি আরও তিন-চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন সকালে ঘন কুয়াশা থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শীতজনিত দুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।