আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। সপ্তাহ ধরে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে জেলার শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গত তিনদিন ধরে জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ফলে হিম ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যহত হচ্ছে কৃষি কাজ। ঘন কুয়াশায় নৌ-ঘাটগুলো থেকে সময় মতো ছাড়ছে না শ্যালে নৌকাগুলো। তীব্র ঠান্ডার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। বিভিন্ন জনসমাগম স্থানগুলো এখন ফাঁকা পরে আছে। বিশেষ করে ছিন্নমুল ও নি¤œ আয়ের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। আজ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আগামি ৩১ তারিখের পর আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
সরজমিন জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর বজরা দিয়ারখাতায় গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে বোরোধানসহ পিঁয়াজ, আলু ও ভুট্টা রোপন করছেন। কৃষি জমিতে কাজ করা ওই গ্রামের মজিদুল, কাদের ও মীরবকস জানান, ‘কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে সকাল ১০টার পর মাঠে এসেছেন। বিকাল ৪টা বাজলেই চারদিকে কুয়াশা জেঁকে বসে ফলে কাজ করা যায় না। আমাদের কাজের খুব ক্ষতি হচ্ছে।’
কৃষক মজিদুল জানান, ‘ঠান্ডা আর কুয়াশায় ভোরে উঠতে চাইলেও পারি না। সকালে খেয়ে ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে জমিতে যাই। কিছুক্ষণ পর পর বাড়িতে এসে আগুণে হাত-পা গড়ম করে আবার মাঠে নামি।’
এই গ্রামের নারী প্রধান পরিবারের মমেনা খাতুন (৬০) জানান, ‘আমার মেয়ের ৬সন্তানসহ ৮জনের পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ নাই। ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে মন চায় না। তাও কষ্ট হলেও যাই। কাজ না করলে খামো কি। ঠান্ডায় নাতি-নাতনীগুলো কষ্ট করছে। কাপড় কেনার টাকা নেই। এই শীতে এখনাকম্বলও পাই নাই বাবা। পাশের বাড়িতে রান্না চড়িয়েছেন গৃহবধূ জহিরন। তিনি জানালেন, ‘সারাদিন ঠান্ডা পানি নাড়াচাড়ার কারণে হাত-পা কুঁকড়ে যায়। চুলকানি হয়। দুদিন আগে আমার ও এক বছর বয়সি সন্তানের বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। এখানে কোন ভালো ডাক্তার নাই। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ব্রহ্মপূত্র নদ পেরিয়ে পাশর্^বর্তী থানাহাট যেতে অনেক সময় লাগে, খরচও বেশি হয়। তাই টোটকা দিয়ে রোগ সাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’
একই অবস্থা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীতে অবস্থিত ৪২০টি চরের প্রায় ৫লক্ষ মানুষের। অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এসব চরের মানুষ মাটি কামড়ে পরে আছে বাপ-দাদার ভিটায় এক অদৃশ্য মায়ায়। শত কষ্ট হলেও তারা বাড়িভিটা ছাড়ছেন না। ফলে এসব চরের নি¤œ আয়ের মানুষ এই হিমেল ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, ১ হাজার ৩শ’ কম্বল পেয়েছি। চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২শ’ কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেসব বিতরণ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা খবর পেলেই নি¤œআয়ের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন জানান, ইতোমধে জেলার ৯টি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলাগুলো থেকে শীতবস্ত্র কিনে বিতরণ শুরু করেছেন। এছাড়াও প্রাপ্ত ২৫ হাজার কম্বল জেলা থেকে বিতরণ করা হয়েছে। নতুনভাবে ৪০ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যেগুলো আগামিতে বরাদ্দ দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।