কুড়িগ্রাম অফিস:
কুড়িগ্রামে দরিদ্র পিতার ১২ বছর বয়সী ছেলে মাদরাসা ছাত্র আবু বক্কর সিদ্দিক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে ছেলে। টাকার অভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না তার পরিবার। কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিক কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পানাতি পাড়া এলাকার রিকশা চালক তাজুল ইসলামের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক দ্বিতীয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস দুইয়েক আগে আবু বক্কর সিদ্দিক মাদরাসা গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই মাঝে মধ্যেই সে অসুস্থ হতো। পরে কবিরাজ ও স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দারস্থ হন তার বাবা। চিকিৎসা নিয়ে প্রাথমিক সুস্থ হয় আবু বক্কর সিদ্দিক। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। তবে একদিন হঠাৎ করেই গুরুতর অসুস্থ হয় আবু বক্কর সিদ্দিক। লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পরে স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে দ্রুত কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় তার পরিবার। সেখানেই সপ্তাহ খানেক থাকার পর চিকিৎসকরা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রংপুর হাসপাতালের ডা. আব্দুল কাদের জেলানীর তত্বাবধানে চিকিৎসা চলাকালে জানতে পারেন আবু বক্কর সিদ্দিক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। রংপুর মেডিকেলের ওই চিকিৎসক আবু বক্কর সিদ্দিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই রিকশা চালক বাবার। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন হাট বাজারে ছুটছেন রিকশা চালক বাবা।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত আবু বক্কর সিদ্দিকের দাদি আকলিমা বেগম বলেন, একদিন আবু বক্কর এসে আমাকে বলতো আমার খালি মাথা ঘুরে। আমরা মনে করছিলাম মাদরাসা যাওয়া ভয়ে এসব বলছে। আবারও ২-৩ দিন পর বাড়িতে এসে তার মাথা ঘুরার কথা বলতো। আমরা সেসময় গুরুত্ব দেই নাই। একদিন খুব জ্বর আসলো সবাই বলছে জন্ডিস হয়েছে মনে হয়। এ জন্য কবিরাজ ও গ্রামের ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাই। কোনভাবে জ্বর কমে না। পরে একদিন হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেলো। আমরা তাকে সাথে সাথে কুড়িগ্রাম হাসপাতাল নিয়ে যাই। হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর রংপুর নিয়ে যেতে বলে ডাক্তার। পরে রংপুর নিয়ে যাই। রংপুরের ডাক্তারও পরিক্ষা করে ঢাকা নিয়ে যাইতে বলে। আমাদের তো টাকা পয়সা নাই কিভাবে ঢাকা যাই। আমার ছেলে রিকশা চালে কোনরকমে সংসারটা চালায়। কি করমো না করমো, চিন্তায় বাঁচি না নাতিকে নিয়ে।
আবু বক্কর সিদ্দিকের বাবা তাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের ব্লাড ক্যান্সার হইছে। কুড়িগ্রাম-রংপুরে চিকিৎসা করে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা শেষ। যে টাকা খরচ করছি সব মানুষের কাছে হাওলাত করা। রংপুরের ডাক্তার ঢাকায় নিয়ে যেতে বলছে। এখন কিভাবে ঢাকা নিয়ে যাবো জানি না। ৭-৮ লাখ টাকা নাকি লাগবে এতো টাকা কই পাবো আমরা। টাকার জন্য কি তাহলে আমার ছেলের চিকিৎসা হবে না। কেউ যদি আমার ছেলে পাশে দাঁড়াইতো, আমার মনে হয় আমার ছেলে সুস্থ হইতো। কোন উপায় না পেয়ে তার চিকিৎসা করার জন্য হাট বাজারে গিয়ে গিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাচ্ছি।
প্রতিবেশি আশলতা বেগম নামের এক নারী বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক আমার সম্পর্কে নাতি হয়। সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ওর বাবা মা গরিব মানুষ। এই রোগের চিকিৎসা করার করার মত সামর্থ্য তাদের নাই। কেউ যদি সহোযোগিতা করতো তাহলে তাদের অনেক উপকার হতো।
পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নের তাজুল নামের এক যুবকের ছেলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। তারা ঠিকমত খেতেই পারে না, আবার ছেলের চিকিৎসা করাবে কি ভাবে। আমরাও স্থানীয় ভাবে তাকে সহযোগী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে তো চিকিৎসা হবে না। তিনি সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া সমাজের দানশীল ও বৃত্তবান মানুষজন এগিয়ে আসলে কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের চিকিৎসা চালানো সম্ভব হবে।
(ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত আবু বক্কর সিদ্দিকের বাবা তাজুল ইসলামের সঙ্গে যে কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে কিংবা সহায়তা করতে চাইল এই নম্বরে ০১৭৪৬৫৩৪০০১ যোগাযোগ করুন। )