লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পুরনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির সেই বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩ কোচ পৌছলো লালমনিরহাট রেলষ্টেশনে।
রোববার(১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ৩টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশন প্লাটফর্মে পৌছে। এটি চালু হলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে রেলওয়ের বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট।
স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট রেলওয়ের একটি বিভাগীয় শহর। রেলের শহর হলেও ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগে তেমন কোন আন্তনগর ট্রেন ছিল না। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আমলে লালমনি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তনগর ট্রেন পায় জেলাবাসী। যা একটি মাত্র রেক দিয়ে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে লালমনিরহাট স্টেশন ছেড়ে মধ্যরাতে ঢাকায় পৌছে পুনরায় একই রেক ফিরে আসে। ফলে রাত্রিকালিন আন্তনগর ট্রেন সুবিধা বঞ্চিতই ছিল রেলওয়ের বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট। দীর্ঘ প্রায় একশত কিলোমিটার লম্বা এ জেলার এক কর্ণারে জেলা সদর। ফলে শহরের লোকজন লালমনি এক্সপ্রেসের সুবিধা পেলেও বাকী ৪টি উপজেলা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর তথা ভারত গামি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাছাড়া দিনে আন্তনগর থাকলেও নেই রাত্রিকালিন কোন আন্তনগর ট্রেন।
এ কারনে জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি সীমান্তবর্তি উপজেলা পাটগ্রামের বুড়িমারী স্টেশন থেকে একটি আন্তনগর ট্রেন। যাতে ভারত গামি পাসপোর্টধারী যাত্রী এবং বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যের পথকে সুগম করবে। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০১১ সালের ১৯ অক্টোর লালমনিরহাট পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা সফরে এসে পাটগ্রাম জসিম উদ্দিন সরকারী কলেজ মাঠে জনসভায় ভাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই দিন জেলাবাসীর দাবি পুরনে কড়িডোর এক্সপ্রেস নামে বুড়িমারী থেকে সরাসরি ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনে একটি আন্তনগর ট্রেন চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দীর্ঘ দিন ধরে এই আন্তনগর ট্রেন চালু করতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে স্থানীয়রা। অবশেষে সেই স্বপ্ন পুরনে সাম্প্রতিক সময় রেলমন্ত্রী বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর ঘোষনা দেন। যা আগামী ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করনের কথাও জানান রেলমন্ত্রী। ঘোষনার পর থেকে সময় গননা শুরু করে জেলাবাসী।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ও জেলাবাসীর দাবি পুরনে চালু হচ্ছে আন্তনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি চালু করতে রোববার ৩টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশন প্লাটফর্মে পৌছে। বাকী কোচ ও রেক সময় মত পৌছে যাবে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এতোমধ্যে এ আন্তনগর ট্রেনটি চালুর সময় সুচিও রেলওয়ে দফতরে সংযুক্ত হয়েছে এবং তা সঠিক সময় চালু করতে দফায় দফায় জুম মিটিং চলছে রেলভবনে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন বলেন, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হলে বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষার বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হচ্ছে শুনে ভাল লাগছে। প্রতিদিন শত শত পাসপোর্ট ধারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা এ রুটে যাতায়ত করে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে সুত্র জানায়, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করতে রেলভবন থেকে দফায় দফায় জুম মিটিং হচ্ছে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে। রোববার ৩টি কোচ পৌছেছে। পর্যাক্রমে বাকী কোচও পৌছে যাবে। আপাত একটি মাত্র ইন্দোনেশিয়ান রেকে চলবে এ ট্রেন। যা লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবে। বুড়িমারী স্থলবন্দর তথা বাকী ৪ উপজেলার যাত্রীদের জন্য আপাত শাটল ট্রেন যুক্ত থাকবে। পরবর্তিতে ডাবল রেক হলে এটি বুড়িমারী স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে রাত ৯টায় ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে সময় নির্ধারন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ট্রেনটি চালু করতে রেলভবনের সাথে প্রতিনিয়ত জুম মিটিং হচ্ছে এ বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের। বুড়িমারী চালু নিয়ে অনেকটা ব্যস্থ সময় যাচ্ছে লালমনিরহাট রেলওয়ে কার্যালয়ে। আপাত একটি রেক দিয়ে লালমনিরহাট থেকে যাত্রা শুরু করবে। ডাবল রেক এলে তা বুড়িমারী থেকে সম্প্রসারিত করা হবে। বুড়িমারীসহ বাকী ৪ উপজেলার যাত্রীদের জন্য শাটল ট্রেন থাকবে। তবে কোনটি শার্টল হবে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের তা এখন নিশ্চিত হয়নি। তবে বুড়িমারী এক্সপ্রেস চালু হচ্ছে সেটা নিশ্চিত।