ছিনতাই কারির কবলে নিস্বঃ গঙ্গাচড়ার অটোচালক আবুল কাশেম

আমাদের প্রতিদিন
2024-09-07 01:47:25

নির্মল রায়, গঙ্গাচড়া (রংপুর):

আবুল কাশেম (৫৪) বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার  লক্ষিটারী ইউনিয়নের পূর্ব মহিপুর গ্রামের তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধের ধারে । তিনি পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক । তার স্ত্রী দুই ছেলে এক মেয়েসহ ৫ সদস্যের সংসার।  বাচ্চাদের পড়া লেখা এবং সংসার চলে অটোরিক্সা চালিয়ে। তার সম্বল বলতে একমাত্র অটো রিক্সাটি । ছেলে-মেয়ে ছোট তাই তিনিই সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। প্রতিদিনের ন্যায় গত ৬ জুন সোমবার বিকেল তিনটার দিকে অটোরিক্সা নিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য বাড়ি থেকে রংপুর শহরের উদ্দেশ্যে বের হয় আবুল কাশেম।

অটোরিক্সা চালিয়ে দিন শেষে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে রংপুর মহানগরীর  বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ের সামনে দুই যাত্রী উঠে আব্দুল কাশেমের অটোরিক্সায় । ওই দুই যাত্রীর গন্তব্য ছিল গঙ্গাচড়ার মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু। সেতুর দক্ষিণ মোকায় এলে ওই দুই যাত্রী আবুল কাশেমকে সেতুর উত্তর মোকায় তাদেরকে নামিয়ে দিতে বলেন। তখন রাত অনুমানিক দেড় টা বাজে।

এসময় ওই দুই যাত্রীকে সেতু পার করে দেয়ার জন্য অটোরিক্সা সেতুর  মাঝখানে এলে ওই দুই যাত্রী আবুল কাশেমের অটোরিক্সা থামিয়ে  তাকে সেতুর উপর থেকে তিস্তা নদীতে  ফেলে দিয়ে তার অটোরিক্সা নিয়ে পালিয়ে যায়। নদীতে পানি কম থাকায় আবুল কাশেম সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে জ্ঞ্যান হারায় এবং লতার ডান হাতটি ভেঙে যায়।

নদীতে জেলেরা মাছ শিকার করে ভোর ৫ টার দিকে তাদের নৌকা পাড়ে ভিড়ালে আবুল কাশেমকে নদীর ধারে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। এসময়  তারা আবুল কাশেমকে চিনতে পেয়ে সেতুর উপরে নিয়ে আসে এবং পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়। পরে পরিবারের লোকজন আবুল কাশেমকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ডান হাতটি কেটে ফেলে দিতে বলেন। পরে হাতটি টিকিয়ে রাখতে আবুল কাশেমের পরিবার অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবশেষে গত এক মাস আগে তার হাতটি কেটে ফেলতে হয়। দীর্ঘ পাঁচ মাসের চিকিৎসায় কাশেমকে বাড়ি ভিটা বিক্রি ও জমানো টাকাসহ প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করতে হয়।

শরীরের ক্ষত সারাতে এখনও তাকে নিয়মিত ঔষুধ সেবন করতে হচ্ছে। এদিকে আবুল কাশেমের দুর্ঘটনার পর তার তিন ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে ।

বাড়ির সামনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কয়েকদিন আগে কাশেম ছোট্ট একটি মুদি দোকান দিয়েছেন তবে দোকানটিতে তেমন কোনো মালপত্র না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিসহ সরকারী সহযোগিতা কামনা করেন।