আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট :
লালমনিরহাটসহ উত্তরের জেলাগুলোতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ফলে এ অঞ্চলে আলু খেতে দেখা দিয়েছে লেট ব্লাইট বা নাবি ধসা রোগ। যাকে স্থানীয় ভাবে কৃষকরা মড়ক বলেন। ছত্রাকজনিত এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় একদিকে ফলন নিয়ে যেমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে তেমনি অন্যদিকে প্রতিকূল আবহাওয়া ও দাম ভালো থাকায় অপরিপক্ক আলু তুলে ফেলছেন কৃষক। এসব কারণে চলতি বছর আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কৃষকদের দাবী কোনো ওষুধেই কাজ হচ্ছে না, গাছ মরে যাচ্ছে।
সড়ে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, পশ্চিমা বাতাসে আলুর লেট ব্লাইট বা মড়ক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় পচে যেতে শুরু করেছে আলু গাছের পাতা। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে আলুর ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছেন কৃষক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাড়বে উৎপাদন খরচ আর এতে ন্যায্যমূল্য না পেলে সর্বশান্ত হবে কৃষক। কৃষকদের দাবি, উৎপাদন খরচ বাড়ায় বাজারে যদি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
জেলায় এ বছর ৬ হাজার ৪শ' ৫৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ হয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে লেট ব্লাইট রোগের দেখা দেয়ায় এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে।
ফসলের রোগতত্ত্ববিদরা জানান, লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হলে প্রথমে আলুর পাতা ঝলসে যায় এবং ধীরে ধীরে গাছ মরে যায়। সাধারণত তিনদিন টানা সূর্যালোক দেখা না গেলে ও ঘন কুয়াশায় আলুখেতে রোগটি দেখা দেয়। আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণেও হতে পারে। মূলত এ সময় পাতা ভেজা থাকায় মড়ক ছড়িয়ে পড়ে। চলতি মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সাধারণত নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আলু রোপণ করেন কৃষক। এর মধ্যে আগাম জাতের আবাদ হয় নভেম্বরে। অনেকে অক্টোবরের মাঝামাঝিতেও আবাদ করেন। এ আলু ৬৫-৭৫ দিনে পরিণত হয়। ডিসেম্বরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে রোপণ করা হয় মূল মৌসুমের আলু। সাধারণত সবজিটি পরিণত হতে সময় লাগে ৯০ দিন। সে হিসেবে মূল মৌসুমের আলুর বয়স এখন ৪০-৪৫ দিনের মতো।
তবে কৃষকদের দাবী, মড়কের কারণে আলু গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। হলুদ হয়ে যাচ্ছে পাতা ও কাণ্ড। ফসল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষক। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। অনেকেই বাধ্য হয়ে অপরিপক্ক আলু তুলে বিক্রি করছে।
কৃষি অফিস বলছে, অনুমোদিত কীটনাশক ছিটিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে সহসাই কাটছে না এমন বৈরি আবহাওয়া।
আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর এলাকার মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘মড়কের কারণে বহু ট্রিটমেন্ট করতেছি। ওষুধ ছিটাচ্ছি, কোনো কাজ হচ্ছে না। এত টাকাপয়সা খরচ করে ওষুধ দিচ্ছি। এখন যদি রোগ না সারে তাহলে আমি তো শেষ হয়ে যাব। আবার শুনতেছি কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া আরো খারাপ হবে।’
আবহাওয়া অফিস বলছে, ‘আগামীতে শীতের তীব্রতা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা কমে গেলে শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। উত্তর অঞ্চলে গত এক দশকের চেয়ে রাতের তাপমাত্রা বেশি কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় দুপুর ১২টায় সূর্যের মুখ দেখা যায়। আবার বিকালের পর পরই সূর্য ডুবে যায়। এ কারণে জমিতে ভালো আলো না পড়ায় ফসল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত না হলে আর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে শেষ পর্যন্ত ফলন বেড়ে যেতে পারে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে আলুখেত লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার সময় নির্দিষ্ট মাত্রায় ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আলু কৃষকের ঘরে উঠবে। আবহাওয়াও স্বাভাবিক হবে। তাই লেট ব্লাইট রোগের বর্তমান পরিস্থিতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব ফেলবে না বলে দাবী তার।