রংপুরে সিন্ডিকেটের কবলে সবজি বাজার, দিশেহারা ক্রেতারা

আমাদের প্রতিদিন
2024-11-29 16:34:31

উৎপাদনে খরচ বেশিসহ দুই কারণে দাম চড়া

সংরক্ষণ ব্যবস্থার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর মহানগরীসহ জেলার সবজি বাজার সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দ্বিগুণ দামে ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত মৌসুমে দাম ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে থাকলেও এবারে দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেক ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষজন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এবারে উৎপাদনে খরচ বেশি ও সিন্ডিকেট এই দুই কারণে সবজির দাম চড়া।

এদিকে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হলেও রংপুরের সবজি চাষিরা ‘পাইকার’ নামের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

জানগেছে,  মিঠাপুকুর উপজেলা হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এর পরেই পীরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় বেশি সবজি চাষাবাদ হয়। এছাড়াও রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়ন সবজির জন্য বিখ্যাত। এই এলাকাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার অভাবে ন্যায্য মু্ল্য থেকে বঞ্চিত থাকেন বেশিরভাগ চাষিরা।

মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর, জায়গীরহাট, লতিপবপুর, শুকুরেরহাট, ময়েনপুর, কাফ্রিখাল, আলিপুর, বালারহাট, রংপুর সদরের পালিচড়া, জানকি ধাপেরহাট, শ্যামপুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর, এসকেএস বাজার, লক্ষিটারি, গজঘন্টাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকায় খেঁাজ নিয়ে জানাগেছে, এসব এলাকার ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, সীম, গাজর, করলা, মুলা, বেগুন, সহ রকমারি শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। মাঠে সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক—কৃষাণীদের। কেউ ক্ষেত থেকে ফসল তুলছেন, কেউ বা পরিচর্চা অথবার স্প্রে করছেন সবজি ক্ষেতে। কারোও দম ফেলার সময় নেই।

এসব উৎপাদিত সবজি প্রতিদিন ট্রাকযোগে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার প্রধান কাঁচামালের আড়ত কারওয়ান বাজারসহ খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। পাইকার নামক এক শ্রেণীর লোক নানা অজুহাতসহ সিন্ডিকেট করে চাষি বা বিক্রেতার নিকট থেকে কম দামে শাক—সবজি ক্রয় করছেন। শুধুমাত্র হাত বদল করেই লাভ করছেন স্থানীয় পাইকাররা। অথচ বাজার থেকে ভোক্তাদের সেই সবজি কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দাম দিয়ে। এর ফলে কারসাজিতে শাকসবজি চাষ করেও আশানুরুপ দাম না পাচ্ছেন না চাষিরা। এনিয়ে চাষিরা চরম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও করার কিছু নেই তাদের।

কৃষকরা জানান, চাষাবাদ করা শাকসবজি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই  সিন্ডিকেটের কারণে কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আগাম সবজি উত্তোলনের পর ওই জমিতে দ্বিতীয় দফায় শীতকালীন সবজি চাষ করা যায়। তবে  ভরা মৌসুমে খুব একটা দাম পাওয়া যায় না। উৎপাদন খরচই ওঠে না অনেক সময়। আর ন্যার্য্য মুল্য বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

এদিকে কৃষক পর্যায়ে মুলা ২—৩ টাকা, পাইকারি ৫—৭ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, পাতা কপি কৃষক পর্যায়ে ১০ টাকা, পাইকারি ১৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, ফুলকপি কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা, পাইকারি ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ টাকা, কাঁচা পিয়াজ কৃষক পর্যায়ে ৫০ টাকা, পাইকারি ৬০—৬৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ে ৪০ টাকা পাইকারি ৫০ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা, ঢোপা বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪৫ টাকা, পাইকারি ৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৮০ টাকা, চিকন বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪০—৪৫ টাকা, পাইকারি ৫৫—৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা পাইকারি ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা, পাইকারি ২০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা, শিম কৃষক পর্যায়ে ২৫ টাকা পাইকারি ৩৫—৪০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫০—৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রংপুর সিটি বাজার, কামাল কাছনা, লালবাগ, মর্ডাণ মোড়, মাহিগঞ্জ ও সাতমাথা, টার্মিনাল বাজারসহ মিঠাপুকুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার  বিভিন্ন বাজার এলাকায় ঘুরে এমন তথ্য জানাগেছে।

মিঠাপুকুরের লতিবপুর বউবাজার এলাকার মজনু মন্ডল নামের এক চাষি জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে বেগুন, ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছেন। জমি তৈরিসহ বীজ, সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ হাজার টাকার বেশি। যে দামে বিক্রি করি তাতে লাভ তেমন হয় না।

আমিনুল ইসলাম ও হুমায়ন রশিদ শাহীন নামের দুই ক্রেতার সাথে কথা হয় রংপুর সিটি বাজারে। তারা জানান, শীতের মৌসুমে গতবার সবজির দাম কম ছিল। এবার তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে কমদামে কিনে আনলেও তা চড়া দামে বিক্রি করছেন চাষিরা।

এব্যাপারে রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলায় শাকসবজির আবাদ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। যা এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, সবজি মানেই পচনশীল পণ্য। সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় ক্ষেত থেকে উত্তোলন করেই বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। এজন্য সমস্যাও হয়। বিষয়টি কৃর্তপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও তিনি জানান। ##