আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:
জাতীয় পর্যায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবার ১০জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তারই প্রেক্ষিতে সমাজসেবা/জনসেবা ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পদক ২০২৪ পুরস্কার পাচ্ছেন কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এবং উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক, বহুমাত্রিক লেখক, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন। আগামী ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে এ পদক তার হাতে তুলে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) জাহেদা পারভীনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় কুড়িগ্রমে আনন্দেও বন্যা বয়ে যায়। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছেন।
সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক পেতে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের খ্যাতিমান আইনজীবী, লেখক ও গবেষক অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন। এবছর স্বাধঅনতা পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন ব্যক্তি—প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা আর অভিন্দনের ভাসছেন কুড়িগ্রামের সন্তান আব্রাহাম লিংকন।
বহুমাত্রিক মানুষ আব্রাহাম লিংকন একজন লেখক, কলামিষ্ট ও গবেষক। তিনি বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রণীত মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে লেখা ১৬টি গ্রন্থের লেখক। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তাঁর লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছাত্র জীবন থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্ত রয়েছেন তিনি। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৯০ সালে সিনেট সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ে কোন বেতন বা সন্মানী ছাড়াও ৩২ বছর ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ফেলানী হত্যা মামলায় তার পরিবারকে আইনী সহায়তা দিয়েছেন। একজন মানবাধিকার কমীর্ হিসেবে সীমান্তে হত্যাকান্ডের বিরোধীতাসহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভারত—বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন ব্যক্তিগতভাবে ২০১২ সালে গড়ে তোলেন উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। নিজ বাড়ির ড্রয়িং রুম, শোবার ঘর, বারান্দা, পাঠকক্ষসহ সর্বত্রই এই জাদুঘরের স্মারকগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। এটি দিনে জাদুঘর, রাতে বাড়ি হিসেবে পরিচিতি হয়েছে।
এখানে রয়েছে খেতাবপ্রাপ্ত এবং খেতাবহীন কিছু মুক্তিযোদ্ধার সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহৃত গুলি ও গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম—ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং ৫ হাজার ৮৬৫ জন রাজাকারের তালিকা। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘরটি। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের দুর্লভ স্মারকে সমৃদ্ধ হচ্ছে বৃহত্তর রংপুরের অন্যতম বাতিঘর উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। এখানে ছুটে এসেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিচারপতি, প্রতিতযশা সাহিত্যিক, পদস্থ কর্মকতার্ ও গবেষকরা। নিজের দান করা ১৮ শতক জমিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন চারতলা ভবন।
স্বাধীনতা পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় প্রতিক্রীয়ায় আব্রাহাম লিংকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। কাজ করছি মানুষের কল্যানে দীর্ঘদিন থেকে। বিচারক মন্ডলীকে ধন্যবাদ আমি তৃণমূলে থাকলেও তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সন্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরো বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করলো। আমার এ অর্জন আমি এ জনপদের মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।