স্বাধীনতা পদক ভূষিত হলেন কুড়িগ্রামের সন্তান এস  এম আব্রাহাম লিংকন আনন্দে ভাসছেন কুড়িগ্রামবাসী

আমাদের প্রতিদিন
2024-07-25 12:26:46

২৫মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী তুলে দিবেন এ পদক

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:

জাতীয় পর্যায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় এবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাচ্ছেন কুড়িগ্রামের নিভৃতে কাজ পাগল আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন। আজ (২৫/০৩/২৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা পদক তুলে দিবেন হাতে।  সেই খবরে কুড়িগ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। তাঁর সৃষ্টি উত্তরবঙ্গ জাদুঘর প্রাঙ্গণে বড় পর্দায় এ অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার জন্য এলাকাবাসী নিয়েছে উদ্যোগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শুক্রবার (১৫০৩/২৪) চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য দশজনের নাম ঘোষণা করে। এস এম আব্রাহাম লিংকন এ পুরস্কার পাচ্ছেন সমাজসেবায় ‘বিশেষ অবদানের’ জন্য। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছেন।

সেই খবরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকে ছবি পোস্ট করছেন। টেলিভিশন, প্রিন্ট পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনেক নিউজ। ফলে গ্রামে বেড়েওঠা এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মানুষের জন্য কাজ করে, মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা স্মারক সংগ্রহ লেখালেখি, আইন শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে এবং চরের শিশুদের শিক্ষা, শিশু শ্রম প্রতিরোধে আন্দোলন সংগঠিত করা, তাদেও অধিকার নিশ্চিত করা। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনা অফিসার এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে উদ্ধারের সাহসীকতা সহ নানা কর্মেও বিবেচনায় লাভ করেন রস্ট্রের সবোর্চ্চ বেসরকারি পদক স্বাধিনতা পদক। সত্যি গৌরভের অহংকারের।

আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলায় আইনি সহায়তা দিয়ে সবার নজরে আসেন এ আইনজীবী। ২০২২ সালে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে আব্রাহাম লিংকন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

আব্রাহাম লিংকন একজন লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে ১৬টি গ্রন্থ তার লেখা।

বাংলা অ্যাকাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক লিংকন ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং জেলা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ১৭ বছর ধরে।

১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন আব্রাহাম লিংকন। ১৯৮৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৯০ সালে সিনেট সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ে বেতন ছাড়াই ৩২ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন আব্রাহাম লিংকন। পাশাপাশি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সীমান্ত—হত্যার বিরোধিতাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আব্রাহাম লিংকন ২০১২ সালে নিজ শহরে গড়ে তোলেন ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। সেখানে রয়েছে খেতাবপ্রাপ্ত ও খেতাবহীন কিছু মুক্তিযোদ্ধার সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহৃত গুলি, গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম—ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং পাঁচ হাজার ৮৬৫ জন রাজাকারের তালিকা। সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রী।

সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর। লিংকনের দান করা ১৮ শতক জমিতে সরকারি উদ্যোগে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন চারতলা ভবন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। কাজ করছি মানুষের কল্যাণে। বিচারকমণ্ডলীকে ধন্যবাদ আমি তৃণমূলে থাকলেও তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সম্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরও বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করল। আমার এ অর্জন এ জনপদের মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।”

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন কাজী আবদুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নইম মো. নজিবউদ্দিন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর)।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছেন ড. মোবারক আহমদ খান।

চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ও ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুনকে রাষ্টে্রর এই সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

সমাজসেবা/জনসেবায় আব্রাহাম লিংকন ছাড়াও অরণ্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।

স্বাধীনতা পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় প্রতিক্রীয়ায় আব্রাহাম লিংকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। কাজ করছি মানুষের কল্যানে দীর্ঘদিন থেকে। বিচারক মন্ডলীকে ধন্যবাদ আমি তৃণমূলে থাকলেও তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সন্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরো বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করলো। আমার এ অর্জন আমি এ জনপদের মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।

উল্লেখ্য উত্তরবঙ্গ জাদুঘর দেশের অন্যতম একটি সংগ্রহশালার খ্যাতি অর্ঝন করেছে ইতোমধ্যে।এখানে রয়েছে খেতাবপ্রাপ্ত এবং খেতাবহীন কিছু মুক্তিযোদ্ধার সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহৃত গুলি ও গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম—ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং ৫ হাজার ৮৬৫ জন রাজাকারের তালিকা। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রী।

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘরটি। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের দুর্লভ স্মারকে সমৃদ্ধ হচ্ছে বৃহত্তর রংপুরের অন্যতম বাতিঘর উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। এখানে ছুটে এসেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিচারপতি, প্রতিতযশা সাহিত্যিক, পদস্থ কর্মকতার্ ও গবেষকরা। নিজের দান করা ১৮ শতক জমিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন চারতলা ভবন।