লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ-র হত্যাকান্ড থামছে না

আমাদের প্রতিদিন
2024-07-27 10:55:00

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :

লালমনিরহাটে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-র হত্যাকান্ড থামছে না। ৪ দিনের ব্যবধানে বিএসএফ-র গুলিতে দু’জন বাংলাদেশী নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতরা পুলিশের ভয়ে তারা গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে পরিবারগুলো। অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

গত ২৬ মার্চ ভোররাতে জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রথমে আহত এবং পরে ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লিটন মিয়া (১৯)। তিনি উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের মোকছেদ হোসেনের ছেলে। সর্বশেষ ৩০ মার্চ রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মারা যান মুরুলী চন্দ্র (৪২)। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় আরও তিনজন। নিহত মুরুলী চন্দ্র ওই উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের সুশীল চন্দ্রের ছেলে।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে রফিউল ইসলাম টুকলু (৩২) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন। নিহত টুকলু উপজেলার বঙ্গের বাজার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে।

মুরুলী চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনরা আহাজারি করছেন। স্ত্রী রাধা রানী শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে মুরুলী চন্দ্রের পরিবার। পেশায় তিনি দিনমজুর। দান করা ৬ শতক জমির ওপর তাঁর দুই কক্ষের বসতভিটা। ছেলে রতন চন্দ্র মাস ছয়েক আগে ট্রলিতে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। সেই ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নেন মুরুলী চন্দ্র

রতন আহাজারি করে বলেন, আমার চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা সীমান্তে যান। আর বিএসএফ গুলি করে বাবাকে মেরে ফেলেছে। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া রাধা রানী বলে, বড় ভাই সংসার চালাতে বাবাকে সাহায্য করতেন। এখন তো বাবা নেই, ভাই বিছানায় পড়ে আছে। কী হবে আমাদের ? কি ভাবে চলবে আমাদের সংসার ? আমার লেখা পড়ার খরচ কে দিবে ?

একই অবস্থা লিটনের পরিবারেও। তাঁর মা দুলালী বেগম বলেন, আমার ছেলে সীমান্তে গেছে। সে অপরাধ করলে তার বিচার আছে। তাই বলে তাকে গুলি করে মারতে হবে? ভুল করলে সাজা আছে। এটা কোন সাজা দিল বিএসএফ। এখন আমার পরিবারের কি হবে ?

লালমনিরহাট জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সদস্য সহকারী অধ্যাপক এমএম আবু হাসনাত রানা বলেন, ভারত বারবার বলে আসছে, তারা সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে। অথচ চার দিনের ব্যবধানে লালমনিরহাটে দুটি হত্যাকান্ড ঘটে গেল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, চোরাচালানকারী সীমান্তে আইন ভঙ্গ করে গেলে বিএসএফ গুলি করে। কোনো হত্যাকান্ড কাম্য নয়। আমরা প্রতিটি হত্যাকান্ডে প্রতিবাদ করি।