লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুজ্জামান আহমেদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারই আপন চাচা অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) মনোনয়ন যাচাই—বাছাইয়ের দিনে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সম্পদের তথ্য গোপন এবং সরকারি বেতন—ভাতার সুবিধা নেয়ার বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ না করায় রাকিবুজ্জামানের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনের সঙ্গে তথ্য গোপন করার প্রমাণস্বরূপ সম্পত্তির দলিলসহ অন্যান্য নথিপত্রও দাখিল করেন মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তার আবেদন আমলে না নিয়ে রাকিবুজ্জামান আহমেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
তবে এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, একজন ব্যক্তির স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত পরিমাণ এত অল্প সময়ে বের করাটা কঠিন। নীতিমালার আলোকে আমাদের অবস্থান থেকে যেটা করা যায় সেটা করেছি। এখন অভিযোগকারী চাইলে আপিল করতে পারবেন এমনকি প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন কিংবা উচ্চ আদালতেও যেতে পারবেন।
রাকিবুজ্জামান আহমেদ স্থানীয় সাংসদ এবং সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি পদত্যাগ করেন। অপরদিকে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ নুরুজ্জামান আহমেদের আপন ছোট ভাই এবং ওই উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। নির্বাচনে চাচা—ভাতিজা উভয়ই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শহরের নর্থকিং রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি মাহবুবুজ্জামান আহমেদ ২১ মে/২০২৪ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। অপর দিকে জনাব রাকিবুজ্জামান আহমেদ নির্বাচনী হলফনামায় ২০১৩ এর ১৭ এর নির্বাচনি বিধি উপবিধি(৩) এর দফা (ঙ) অনুসারে এর সমর্থনে জমি ক্রয়ের দলিল এবং সরকারি বেতন উত্তোলন গোপন করে তথ্য গোপন করেছেন। যা পরিপত্র (৭) এর ৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দাখিল করা প্রমাণ ও তথ্যাদি অনুসারে প্রার্থী রাকিবুজ্জামান আহমেদের মোট জমির পরিমাণ ৪২.২৩ একর, তন্মধ্যে প্রার্থী ১৬.৬৫ একর জমির বিবরণ উল্লেখ করেছেন। অবশিষ্ট ২৫.৫৮ একর জমি যার মূল্য ১,৪৬,৮৫,০০০/—(এক কোটি ছেচল্লিশ লক্ষ পচাঁশি হাজার) টাকা; যা প্রার্থী তার দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেন নাই। প্রার্থী স্বয়ং জ্ঞাতসারে তথ্য গোপন করেছেন এবং তিনি এক বছরের সরকারি কলেজ থেকে প্রভাষক পদে প্রাপ্ত বেতন বাবদ= ৩,৩৪,৩২৪/—(তিন লক্ষ চৌত্রিশ হাজার তিনশত চব্বিশ) টাকা উত্তোলন করেছেন, যা প্রার্থী তার হলফনামায় উল্লেখ করেন নাই। প্রার্থী জ্ঞাতসারে দাখিলি হলফ নামায় তথ্য গোপন করেছেন। যা নির্বাচনি বিধি মালা ২০১৩ (১৭) এর বিধি উপবিধি ৩ এর ধারা মোতাবেক সুনির্দিষ্ট অপরাধ। যার ফলে প্রার্থীর দাখিলী মনোনয়ন পত্র বাতিল হবে মর্মে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, রিটার্নিং কর্মকর্তা আমার আবেদন আমলে না নিয়ে রাকিবুজ্জামান আহমেদকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন।
নির্বাচনি আইনে বলা আছে, তথ্য গোপন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুএক একর নয়, ২৫ একর জমি তিনি হলফনামায় দেখাননি। এ বিষয়ে তিনি আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করবেন এবং বিষয়টি নিয়ে দুদকের কাছেও যাবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী মহোদয় গত সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তার ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের কোনো সম্পদ দেখাননি। তাহলে আজ এই ৪০/৪৫ একর জমি কোত্থেকে এলো— এটা আমার প্রশ্ন।’
‘নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী যদি নির্বাচন না হয় তাহলে ভোট কিভাবে হবে’— এমন প্রশ্নও তিনি তোলেন।
মাহবুবুজ্জামান আরও বলেন, এমপি বলয়ের প্রভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা অবৈধ মনোনয়নটি বাতিলের সাহস পাননি। আমি তাই আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচারের আবেদন করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান, মাহবুবুজ্জামান আহমেদের আইনজীবী রাজা মিয়াসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৪—২৬ এপ্রিল এই উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, ২৭—২৯ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি এবং ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।