দিনাজপুরে অব্যাহত দাবদাহে ঝরে পরছে লিচুর গুটি :চরম ফলন বিপর্যয়ের আশংকা

আমাদের প্রতিদিন
2024-12-07 01:38:13

লিচুর বাগানে অবিরত টিপটপ শব্দ!

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

লিচু বাগানে প্রবেশ করলেই অবিরত কানে ভেসে আসছে টিপটপ শব্দ। যেনো বৃষ্টির বড় বড় ফোটা ঝরছে। আসলে এটি বৃষ্টির শব্দ নয়, তপ্ত আবহাওয়ায় গাছ থেকে লিচু’র গুটি ঝরে পরার শব্দ। অব্যাহত দাবদাহে গাছ থেকে অবিরত ঝরে পরায় এখন এমনই টিপটপ শব্দ শোনা যাচ্ছে লিচুখ্যাত দিনাজপুরের লিচুর বাগানগুলোতে। প্রকৃতির অব্যাহত এই বিরূপ আচরনে লিচু চাষীরা অনেক চেষ্টা করার পরও গাছ ধরে রাখতে পারছেনা নতুন আসা লিচুর গুটিগুলো। এতে এবার চরম ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছে লিচু চাষীরা। 

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে দিনাজপুরের সদর উপজেলার লিচুখ্যাত এলাকা মাসিমপুরের বিভিন্ন লিচুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাগানেই অব্যাহতভাবে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছের নীচে পড়ে আছে ঝরে পরা অসংখ্য লিচু। গাছতলায় যেনো লিচুর গুটির স্তুপ জমেছে। আর গাছের দিকে তাকালে লিচুর মঞ্জুরীগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। প্রতিটি মঞ্জুরীতে লিচু আছে ৬ থেকে ৭টি। যেখানে একটি মঞ্জুরীতে কমপক্ষে ২০টি লিচু থাকার কথা। এছাড়াও মঞ্জুরীগুলো শুকিয়ে তামাটে রং ধারণ করেছে।

মাসিমপুরের লিচুচাষী আকবর আলী জানান, লিচু গাছে এবার প্রচুর মুকুল এসেছিলো। গাছের প্রতিটি মঞ্জুরী মুকুলে পরিপুর্ণ ছিলো। কিন্তু গুটি আসার সময় থেকেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারনে গাছ ঝরে পড়তে শুরু করে লিচুর গুটি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না গাছের গুটি। মঞ্জুরী থেকে অবিরত ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। গাছের নীচে স্তুপ জমে গেছে ঝরে পরা লিচুর গুটির। আর মঞ্জুরীগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত চারভাগের একভাগ গুটি মঞ্জুরীতে ধরে আছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এবার লিচুর মুখও দেখা যাবে কি—না সন্দেহ।

সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের মোজাফ্ফর আলী। প্রতিবছরই আগাম বাগান কিনে লিচু চাষ করেন। এবারও ৬টি বাগান কিনেছেন। রোববার বাগানে গিয়ে তার সাথে কথা বলতেই বলেন, চোখের সামনে সব গুটি ঝরে যাচ্ছে। কোন কুলকিনারা পাচ্ছি না। লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন আসলের দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

একই উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের লিচু চাষী জাকির হোসেন জানান, তার বাগানে মাদ্রাজী, বোম্বাই, বেদানা জাতের লিচু গাছ রয়েছে। অব্যাহত তাপপ্রবাহ আর প্রখর রোদের কারনে ঝরে পরছে লিচুর গুটি। তিনি জানান, মাদ্রাজী ও বেদানা জাতের গাছের লিচুই বেশী ঝরে পড়ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিচুর গুটি আসার সময় সাধারণত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে লিচুর ফলনের জন্য বেশ ভালো। কিন্তু দিনাজপুরে বর্তমানে অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বিরাজ করছে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা লিচুর ফলনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

লিচুকে দিনাজপুরের ব্র্যান্ডিং হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কিছুদিন থেকেই কাজ করে আসছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া সম্পন্ন করা তরুন উদ্যোক্তা মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি বললেন, দিনাজপুরে অব্যাহত প্রচন্ড তাপমাত্রার কারনে লিচুর গাছগুলোতে প্রস্বেদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রস্বেদন ক্ষমতা বৃদ্ধির কারনে লিচুর যে গুটিটি রয়েছে, তার শরীরবৃত্তিয় কার্যক্রম পরিচালনা জন্য যে পরিমান পানির দরকার, সেটি না থাকার কারনে গুটিগুলো পরে যাওয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই তাপমাত্রা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দিনাজপুরের এবার আশংকাজনক হারে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটতে পারে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ—পরিচালক (উদ্যান) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অব্যাহত অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে লিচুর গাছ থেকে ঝরে পরছে গুটি। গাছের গুটি রক্ষায় লিচু চাষীদের বাগানে নিয়মিত সেচ ও গাছে ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, দিনাজপুরে এবার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। দিনাজপুরের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই সরবরাহ করা হয় দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচু।