ঘোড়াঘাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস
বনবিভাগের নজরদারির অভাবে নার্সারিগুলোতে অবাধে উৎপাদন হচ্ছে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাসের চারা
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
বনবিভাগের নজরদারির অভাবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাজারের সাপ্তাহিক হাটে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস চারা বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ক্রেতারাও না বুঝে কিনছেন নিষিদ্ধ এ গাছ। অপরদিকে নার্সারি গুলোতেও এ গাছের চারা উৎপাদনের প্রতিযোগিতা চলছে, যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলার ওসমানপুর, ডুগডুগী হাট, রানীগঞ্জ বাজার সহ ঘোড়াঘাট পৌরসভার সাপ্তাহিক হাটের দিন এই গাছ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছ এভাবে বিক্রি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের নেই কোনো নজরদারি।
গত একমাসে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে, বাড়ির আশপাশে, খালের ধারে সহ পতিত জমিতে বাগান আকারে ব্যাপক হারে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়েছে। ঘোড়াঘাট পৌরসভা সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের মেহেদী নার্সারি, ৭নং ওয়ার্ডের আয়শা সিদ্দিকা নার্সারি, নার্সারির মালিক রবিউল, সাহেব উদ্দিন সহ নাম না জানা উপজেলার অনেক নার্সারির মালিকরা এ গাছের চারা সরবরাহ করে থাকেন।
জানা যায়, ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০০৮ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এ গাছের চারা উৎপাদন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু দ্রুত বর্ধনশীল ও দাম বেশি পাওয়ার লোভে মানুষজন এ গাছ রোপণ করছেন।
পার্শবর্তী গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে ইউক্যালিপটাসের চারা বিক্রি করতে আসা ইব্রাহিম বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হামরা কিছু জানিনা বাহে। হামাহরক আজকাই মানা কললে কাল থেকে আর বেচমনা।
আয়শা সিদ্দিকা নার্সারি মালিক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে বন কর্মকর্তা আমাদের কখনও নিষেধ করেনি। আমরা অল্প করে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করি।
বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, ‘নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের উদ্যোগে লোকজনকে সচেতন করতে হবে। পরিবেশের স্বার্থে আমাদের সবার এই গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলবে এই গাছ।’
ঘোড়াঘাট সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক জয়া রানী বলেন, অতিরিক্ত পানি শোষণের কারণে ইউক্যালিপটাসকে পরিবেশের বিরূপ গাছ বলা হয়। এটি পরিবেশের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। এ গাছের বিষয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে বার্তা না পৌছাতে পারলে লাভ হবে। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে বেশি বেশি করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট উপজেলা বন কর্মকর্তা ফসিউল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, তবে ডিসি অফিসের মিটিং এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একবার শুনেছিলাম। এবার উপজেলা মাসিক মিটিং এ বিষয়টি তুলে ধরবো।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এটি বন ও পরিবেশ দপ্তরের বিষয়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে বন বিভাগ যে কোন সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সহযোগিতা করার থাকলে আমরা তা অবশ্যই করবো।