কুড়িগ্রামের হাটের ভূমি জটিলতায় হাটের উন্নয়ন কাজ বন্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা
কুড়িগ্রাম অফিস:
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারের ভূমির মালিকানা জটিলতায় উন্নয়ন কাজ বন্ধে অস্থায়ী নিষেজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বিবাদী করে আদালতে একটি মামলা করেন হাটের ভূমির মালিকানা দাবিদারের পক্ষে বজলার রহমান ।
জানা যায়,স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রভাত আই-৩প্রকল্পের আওতায় বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় এক কোটি ০৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে তিনটি হাট সেড, মহিলা মার্কেট, বাজার কমিটির অফিস কক্ষ, ওপেন সেলস প্লাটফর্ম, পুরুষ ও নারী টয়লেট। এসব অবকাঠামো বাস্তবায়ন করবে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।
তবে এসব উন্নয়ন কাজ শুরুর আগেই হাটের ভূমির ৩৫শতাংশের মালিকানা দাবী করে চলতি বছরের ৩০ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলা যুগ্ম জজ আদালতে সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ৯৪জন অংশীদারের পক্ষে বজলার রহমান মন্ডল। মামলায় বিবাদী করা হয় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী,বঙ্গসোনাহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে।
উক্ত মামলায় উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ২৮মে নির্মাণ কাজ বন্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন আদালত। গত ১৯জুন সরকার পক্ষ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার উপর আদালতে আপিল করলেও নিষেধাজ্ঞা আদেশটি ৩১আগষ্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন আদালত। পরবর্তিতে ৩১আগষ্ট মামলার শুনানী শেষে স্থগিত আদেশ বর্ধিত করেনি আদালত। ফলে পূর্বের নিষেধাজ্ঞাই বহাল রয়েছে। একারণে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ।
মামলারবাদী বজলার রহমান মন্ডল জানান, ১৯৬৯ সালের ১০জুলাই সম্পাদিত দলিল মোতাবেক বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চর বলদিয়া মৌজায় ৬৭১নং খতিয়ানে ৩৮শতাংশ জমির মধ্যে ১০০৭ দাগে ৩৫ শতাংশ এবং ৩০৪৯ দাগে ০৩ শতাংশ জমি ১৯৬৯সালের ১০জুলাই ১৩জন ক্রেতা ক্রয় করেন। তখন থেকে ওই মালিকানা জমিতে চৌধুরী বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠা পায়। তবে ওই জমি বাজারের নামে রেজিষ্ট্রার করে দেয়নি ১৩জন মালিক। ইতিমধ্যে ১২জন মালিক মারা গেছেন। মৃত এই ১২জন মালিকের ৯৪জন ওয়ারিশগণ ৩৫শতক জমির মালিকানা দাবী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি দাবী করে আরও বলেন,ওয়ারিশগণ এখন পর্যন্ত ওই জমির মালিক। আদালত ওই জমিতে উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখার নিদের্শ দিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ নির্মাণ কাজ বন্ধ করছে না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রভাব দেখিয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে আবারও আদেশ ভায়োলেশনের মামলা করেছি আমরা।
বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তা লিটন মিয়া বলেন, চৌধুরী বাজারটি ১৯৬৬সালে চালু হয়। সেই থেকে বাজারটি সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হচ্ছে। বাজারের জমি বাজারের নামেই আরএস রেকর্ড ভুক্ত রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী হারুন উর রশীদ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারের উন্নয়ন কাজ মাঝ খানে বন্ধ ছিলো। তবে সেটি স্থায়ী নিষেধজ্ঞা নয় । আমরা একবার রায় পেয়েছিলাম। এখন উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে আবারও কাজ চালু রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে জমির দাবীদারদের সাথে উপজেলা চেয়াম্যানের আলোচনা চলছে। বাদী পক্ষ নতুন করে আদালতের আদেশ ভায়োলেশনের একটি মামলা করেছে শুনেছি। আমি ঢাকায় আছি,এখন পর্যন্ত নোটিশ পাইনি।
এই বিষয়ে বঙ্গসোনাহাট ইউপি চেয়ারম্যান মায়নুল ইসলাম হাটের জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাটের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান মিমাংসার উদ্যোগ নিলেও তা সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার ১২সেপ্টেম্বর হাটের উন্নয়ন কাজ বাদী পক্ষ এসে বন্ধ করে দিয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরন্নবী চৌধুরী বলেন,আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকেই হাটের জমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরকারের কাজে বাধা প্রদানের জন্য তারা মামলা মোকদ্দমায় গেছে। তাদেরকে নিয়ে অনেক বার সমাধানের চেষ্ঠা করেও সফল হইনি বলেও জানান তিনি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন,আমি সদ্য যোগদান করেছি এই উপজেলায়। আমি যতদূর জানতে পেরেছি হাটের ওই জমিটি আরএস রেকর্ড অনুযায়ী খাস জমির অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে হাটের জমি ইজারা দেয়া হয়ে আসছে। এরপরও আমি বিষয়টি ভালো ভাবে খোঁজখবর নিবো।