মিঠাপুকুরে স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অকালেই নিভে গেল শিক্ষার্থী আবিরের প্রাণ প্রদীপ
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণে অকালেই নিভে গেল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির হাসান আবিদের (১২)
জীবন প্রদীপ। সোমবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৪ টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর তার মৃত্যু হয়।
নিহত আবির পার্শ্ববর্তী পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা ইউনিয়নের দানিয়ালের পাড়া গ্রামের রাজা মন্ডলের ছেলে। আবিরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফুসে উঠেছে স্থানীয় জনতা। তারা জানান, ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য ঝুকিপূর্ণ একটি নির্মাণাধীন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। ভবনটির দেয়াল ঘেঁষে ৩৩ কেভি ভোল্টের মিঠাপুকুর সাব স্টেশনের বিদ্যুৎ সংযোগের তার চলে গেছে সেই তারে বিদ্যুততায়িত হয়ে অগ্নিদগ্ধ হয় শিক্ষার্থী আবির। ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দিলেও তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা শিক্ষা বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের এমন উদাসীসতায় নানা প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিশুদের জীবন নিয়ে খেললেও নীরব সংশ্লিষ্ঠরা।
উল্লেখ্য, উপজেলার শঠিবাড়ী গোড়বান্দা এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ লাগোয়া ৩৩ কেভি ভোল্টের লাইন চলে গেছে। সেই লাইন সংলগ্ন বিল্ডিং তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে স্কুল শেষে কোচিং ক্লাস করার সময় ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবির মন্ডলসহ দুই শিক্ষার্থী ৩৩ কেভি ভোল্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। আগুন লেগে যায় আবির হোসেনের শরীরে।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা গুরুত্বর আহত অবস্থায় আবিরকে মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসক। রাতে সেখানকার চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষার্থী আবির হাসান আবিদ।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আখলাক হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের কোন অনুমোদন নেই। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিঠাপুকুর থানার এসআই ইমরান হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে তার মামা পরিচয়ে একজন স্কুলের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তিনি তা পরে লিখিত দিয়ে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, যতটুকু শুনেছি স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে এমনটা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্কুলটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।