স্বাধীনতার ৫২বছরেও স্বীকৃতি হয়নি“হাতিয়া গণহত্যা দিবস”
কুড়িগ্রাম অফিস:
আজ ১৩ নভেম্বর। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার “হাতিয়া গণহত্যা দিবস”। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্যতম নারকীয় এই হত্যাকান্ডের ইতিহাস “হাতিয়া গণহত্যা” দিবস হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলে ও কুড়িগ্রামবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। দেশের উত্তরবঙ্গের সব থেকে বড় এই গণহত্যা স্বাধীনতার ৫২বছরেও “হাতিয়া গণহত্যা” দিবস হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় আজও নিহত শহীদের স্বজনরা স্থানীয়ভাবে স্বরণ করে আসছে দিবসটি। তারা সরকারি ভাবে হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালনের দাবী জানান।
১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর শুক্রবার। ২২ রমজান। ট্রেন যোগে পাঁচশর মতো বর্বর পাকিস্থানি সৈন্য উলিপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় কুড়িগ্রাম থেকে। পথিমধ্যে ৩ ভাগ হয়ে হাতিয়ার দিকে যাত্রা করে তারা। সেই নারকীয় রক্তঝরা দিনটি ছিল ১৩ নভেম্বর ২৩ রমজান শনিবার। গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ সেহরী খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবার অনেকেই ফজরের নামাজের সুমধুর আজানের ধ্বনি শুনে নামাজের জন্য মসজিদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর মর্টার সেল আর বন্দুকের অবিরাম গুলিবর্ষনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে হাতিয়ার দাগারকুটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম গুলো। সহজ সরল নিরীহ মানুষগুলো কিছু বুঝে উঠার আগেই পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার,আলবদর,আল-সামস বাহিনী মিলে গ্রামের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। আর সাথে চলতে থাকে লুটপাট ও নির্যাতন। এরকম পরিস্থিতিতে এলাকার নিরীহ মানুষজন জীবন বাঁচানোর জন্য এদিক ওদিক এলোাপাতারী ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর ছোড়া বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে মানুষজন জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেত, ঝোপ-ঝাড়ে শুয়ে জীবন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। অনেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাচাঁনোর চেষ্ঠা করে। কিন্তু অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে আসে এলাকার আকাশ-বাতাস। এসব অসহায় মানুষের জীবন বাচাঁনোর চেষ্ঠা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সহযোগীতায় আত্মগোপন করা মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে এসে দাগারকুটি গ্রামে সারিবদ্ধ ভাবে ৬৯৭ জনকে নির্দয় ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন মায়ের কোলের শিশুটিও রক্ষা পায়নি। সারা দিন ব্যাপী চলে হানাদার বাহিনীর হত্যা আর অগ্নিসংযোগ। আগুনে পুড়ে যায় বাগুয়া অনন্তপুর,দাগারকুটি,হাতিয়া বকশী,রামখানা,নয়াদাড়া,নীলকন্ঠ,যমুনা,মন্ডলেরহাটসহ আশ পাশের গ্রামের শতশত ঘর-বাড়ী। মুহুর্তে গ্রামগুলো পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। সেদিন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার,আল-বদর, আল-সামস বাহিনীর সহযোগীতায় উপজেলা শহর হতে প্রায় ৮কিঃ মিঃ পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের কোল ঘেষে হাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতশত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। সেগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। দাগারকুটি গ্রামটিকে ঘিরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে এলাকার মানুষজন প্রতি বছর শহীদদের স্মরণ করে আসছে।
কিন্তু গত আড়াই দশকে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে দাগারকুটি গ্রামটিকে বিলীন করে দিয়েছে। বর্তমানে অনন্তপুর বাজারের পশ্চিম দিকে নতুন করে স্মৃতিসৌধ করে দিবসটি পালন করে আসছে শহীদ পরিবারগুলো সহ উলিপুরবাসী। গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারগুলো এবং কুড়িগ্রামবাসী “হাতিয়া গণহত্যা দিবস” হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার দাবী জানানো হয়।
হাতিয়া গণহত্যা বিদস দিবস পালন কমিটির আয়োজনে সোমবার সকালে অনন্তপুরে শহীদ মিনারে পুস্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনসভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,কুড়িগ্রাম-৩আসনের এমপি অধ্যাপক এমএ মতিন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু,উপজেলা নিবাহী কমকর্তা আতাউর রহমান,জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মতি শিউলি, আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আহসান হাবীব রানা,উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা,হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া প্রমুখ।