পঙ্গুত্ব জীবন থেকে সুস্থ হতে চায় চিলমারীর আইরিন
চিলমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
পঙ্গুত্ব জীবন থেকে সুস্থ্য হয়ে লেখা-পড়া করে ব্যাংকার হতে চায় ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছা.আইরিন আক্তার।স্পাইনাল কড ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কোমরের নিচের অংশ পঙ্গুত্ব বরনকারী আইরিন চিকিৎসা করলে সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা পয়সা প্রয়োজন যা তার দিনমজুর বাবার পক্ষে যোগান দেয়া অসম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পেরে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভেঙে পড়েছে আইরিনের মন।তার উপর কোথা থেকে আসবে অর্থ? কিভাবে হবে তার চিকিৎসা? এরুপ নানা চিন্তা মাথায় নিয়ে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে দিন যায় তার। মাদ্রাসায় যেতে না পারায় চলতি পরীক্ষা বাসায় বসেই দিচ্ছে আইরিন।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাধীন রমনা মডেল ইউনিয়নের পাত্রখাতা মাষ্টারপাড়া এলাকার দিন মজুর মো.আব্দুল আজিজ মিয়ার কন্যা মোছা.আইরিন আক্তার(১৫)। স্থানীয় পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। লেখা-পড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও সে পঙ্গুত্বের কারনে অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীদের মতো মাদ্রাসায় গিয়ে লেখা-পড়া করতে পারছে না। চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণকারী আইরিন আক্তার জানায়,লেখা-পড়া করে সে ব্যাংকে চাকুরী করতে চায়।
আইরিনের মা মোছা.নাছিমা বেগম জানান,দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট আইরিন। ছোট বেলা থেকেই বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট ছিল আইরিন। ৫বছর বয়সে হঠাৎ ডান পা খুড়িয়ে হাটতে থাকে আইরিন।মেয়েকে ডান পা খুড়িয়ে হাটতে দেখে আমরা বিচলিত হই এবং বাড়ীতে কবিরাজ এনে ঝাড় ফুক করাতে থাকি। ঝাড় ফুকের চিকিৎসা দিয়ে ডান পা খুড়িয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ভালই চলছিল আইরিন। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর হঠাৎ করে কোমর থেকে নিচের অংশ অবস হয়ে যায় আমার মেয়ের। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে রংপুর,শেষে ঢাকায় নিয়ে যাই আইরিনকে। এক পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসা শেষে সাভারের সিআরপি হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তারা। পরে সিআরপি হাসপাতালে নিয়ে ২৪দিন চিকিৎসাও নেয়া হয়েছিল। দিনমজুর আইরিনের বাবা বিভিন্ন জায়গায় ্ঋন করে প্রায় সাড়ে ৩লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল যা চিকিৎসা পিছনে ব্যয় হয়। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় ২৪ দিন পর বাড়ীতে ফিরে আসি আমরা। পায়ে একটি কৃত্রিম পা দিয়ে থেরাপিসহ চিকিৎসা করায় আইরিন অনেকটা সুস্থ বোধ করছে এবং স্ক্রেস দিয়ে সামান্য পরিমান হাটতে পারে। চিকিৎসক ৬মাসের মধ্যে আবারও ডাকলে আমরা অর্থের অভাবে যেতে পারি নাই।এসময় আইরিনের মা দুঃখ করে বলেন,টাকা পয়সা থাকলে আজ আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে স্কুলে যেতে পারতো।
ঢাকা সাভারস্থ সিআরপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। দিন মজুর হিসাবে অন্যের ভাটায় কাজ করা আইরিনের গরিব পিতার পক্ষে এত টাকা যোগান দেয়া অসম্ভব। মেধাবী ছাত্রী আইরিন সুস্থ হয়ে লেখা-পড়া করতে চায়।এজন্য তিনি বিত্তশালীদের সহযোগীতা কামনা করেন।
রমনা মডেল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো.মুনসুর আলী জানান,ছোট বেলা থেকে আইরিন ভালই ছিল। হঠাৎ করে কোমরের নিচের অংশ অবস হয়ে পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছে। সে মেধাবী ছাত্রী বলে জেনেছি।চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগীতা পেলে মেয়েটি সুস্থ হয়ে জীবন যাপন করতে পারতো।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার(অঃদাঃ) নাজমুল হাসান বলেন, আইরিন প্রতিবন্ধি হিসাবে সমাজ সেবা থেকে নিয়মিত প্রতিবন্ধির ভাতা পায়। দপ্তর থেকে কোন সুযোগ থাকলে তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃকর্মকর্তা ডা.আমিনুল ইসলাম বলেন,সঠিক সময়ে এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবে আইরিন পঙ্গু হয়েছে। যতটুকু জেনেছি সাভারের সিআরপি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করালে সে চলাফেরা করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।