অব্যাহত তীব্র শীত:দুর্বিসহ অবস্থায় কৃষি নির্ভর দিনাজপুর জেলার সাড়ে ৯লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিক
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
পনেরো দিন ধরে অব্যাহত হাড় কাঁপানো তীব্র শীত। পাঁচ দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা জনপদ। সকালে কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির পানির মতো। বেশ কয়েকদিন থেকেই দিনের বেলা দেখা নেই সূর্য্যরে। বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস।
প্রকৃতির এই বিরূপ আবহাওয়ায় দুর্বিসহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে কৃষি নির্ভর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৯ লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিক। কাজ না করলে পেটে ভাত নেই, আর এই বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ফাঁকা ফসলের মাঠে কাজ করাও দুস্কর। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে জেলার এই বিপুল সংখ্যক কৃষি শ্রমিক।
আমন আবাদের এখন চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। মাঠে রয়েছেন বিভিন্ন জাতের সবজী ও রবিশষ্য। প্রতিদিন এসব ফসলের পরিচর্য্যা করতে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের। আর এই দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রাম। অব্যাহত ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো তীব্র শীত উপেক্ষা করে কপি ক্ষেতে কাজ করছিলো কম্পিনাথ রায়সহ ৩ জন কৃষি শ্রমিক। সোমবার কাছে গিয়ে কথা বলতেই কম্পিনাথ বলেন, ‘বেজায় (খুবই) জার (শীত) , এই জারত কাম করিতে হাত-পাও গেলা থোপসা হই আইসেছে। কি করিমো-কাম না করিলে হামার ভাতও হয়না। আর এই জারত কাম করিতেও বেজায় কষ্ট হচে’। খালি হাতে হিমশীতল মাটি নিয়ে কাজ করতে গোটা শরীর থর থর করে কাঁপছিলো তার। এমন শীতে কাজ করছেন কিভাবে?-এমন কথা জিজ্ঞেস করতেই কম্পিনাথ কেঁপে কেঁপে এমন উত্তর দেন। তার সাথে ওই কপি ক্ষেতে কাজ করছিলো আরও দুই শ্রমিক। তাদেরও অবস্থা অনুরূপ। তারা জানান, মাঠে কাজ না করলে তাদের ভাত জোটে না। তাই রোদ, বৃষ্টি, গরম আর তীব্র শীত হোক-তাদের কাজ করতেই হবে। কম্পিনাথ আরও বলেন-এই শীতে বাড়ীতে কাপড় মুড়িয়ে বসে থাকলে তাদের খাবার দিবে কে? তাই এই শীত উপেক্ষা করেই মাঠে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
শুধু কম্পিনাথ রায় নন, গত কয়েকদিনের শৈত্য প্রবাহ আর হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে দুর্বিসহ অবস্থা দিনাজপুর জেলার সাড়ে ৯ লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিকের। অনেকেই এই শীতে কাজ না পেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। আবার অনেকেই দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে মাঠে কাজ করছেন তীব্র শীত উপেক্ষা করে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে জেলার মোট লোকসংখ্যা ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন। এদের মধ্যে কৃষি শ্রমিক ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই হিসেব মতে দিনাজপুর জেলায় কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৬ জন। এই সাড়ে লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিক অব্যাহত এই তীব্র শীতে চরম দুর্বিপাকে রয়েছে। বেশীরভাগ শ্রমিকই কাজ না পেয়ে বাড়ীতে বসে আসে অনাহারে-অর্ধাহারে।
অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ দেশের উত্তর জনপদের স্বাভাবিক জনজীবন। গত ১২ জানুয়ারী থেকে বইতে শুরু করে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। গত শনিবার ও রোববার দিনাজপুরে বিরাজ করে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সোমবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ( সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা মাপন যন্ত্রের পারদ একটু উপরে উঠলেও কমেনি শীতের তীব্রতা। মঙ্গলবারও দিনভর দেখা মেলেনি সূর্য্যরে। সকালে পানির মতো ঝরে কুয়াশা। এতে রাস্তাÑঘাট পানিতে ভিজে যায়।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, পৌষের শেষে এসে দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারনে শীতের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানান তিনি। আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্য্যরে তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।