ভেজাল কীটনাশকে পঁচলো ক্ষেতের আলু, দিশেহারা চাষী
নির্মল রায় ,গঙ্গাচড়া(রংপুর):
দুই-তিন সপ্তাহ পর ক্ষেত থেকে আলু ঘরে উঠানোর কথা। সেই আলু ক্ষেতের গাছ চুপসে যাচ্ছে। ডগা শুকিয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। এবারের শীত মৌসুমে আলুর ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচতে আগাম কীটনাশক প্রয়োগের পর এমনেই ঘটনা ঘটেছে গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক কৃষকের। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে অঙ্কুর কোম্পানির সিসটিন কীটনাশক প্রয়োগের পর পরেই ঘটেছে এমন ঘটনা। কৃষককের দাবি প্রায় ৫০ একর জমির আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে ।
গজঘণ্টা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ও রমিছা দম্পতি। বর্গা নেওয়া এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন আলু। জানুয়ারী মাসের শুরুর দিকে আলুর ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরামর্শে অঙ্কুর কোম্পানির সিসটিন নামক কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এই কীটনাশক প্রয়োগের পর থেকেই মরে যাচ্ছে আলু গাছ। এমন অবস্থায় অনেকটা অসহায় এই দম্পতি।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে কথা হয় ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী রমিছা বেগম এর সাথে তিনি বলেন, ‘ ঘরের গরু ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আলু লাগাইছি দুইটা টাকা লাভের আশায়। শীতোত ক্ষ্যাত যাতে নষ্ট না হয় ওই জন্য হামার ময়নার বাপ বাজার থাকি ঔষুধ (কীটনাশক) কিনি আনি জমিত দিছে। সেই ঔষধ (কীটনাশক) দেওয়ার পর থাকি আলুর গাছ গুলা ক্যানবা পঁচি যায় চোল। ছওয়ার মতন যত্ন করি ক্ষ্যাত আবাদ করি আইজ এই অবস্থা। এখন তো আলুও হইবে না আর ধান লাগাবার পামো না । আগত যদি জাননো হয় যে ঔষুধ (কীটনাশক) দিয়া এমন হইবে তাইলে কি আর ঔষুধ দেই।
রমিছা বেগম এর মতো একই ইউনিয়নের আরও শতাধিক কৃষক জানান, ‘সিসটিন নামের কীটনাশকটি ব্যবহার করার দুই তিনদিন পর থেকেই আলুর গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়া শুরু করে। শেকড়ে পঁচন ধরে সব শেষ হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে আবাদ করা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা সবাই। এখন ওই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরন চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
কৃষকদের অনেকেই স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা যদি মাঠে আসতো, আমাদের পরামর্শ দিতো তাহলে আজ আমাদের এই অবস্থা হতো না।
এদিকে কীটনাশক কোম্পানির কয়েকজন ডিলার মালিকরাও জানান,অঙ্কুর কোম্পানির ছত্রাক নাশক সিসটিন কীটনাশক ব্যবহারের পর এরকম অভিযোগ আসছে সব জায়গা থেকে।
কীটনাশক ব্যবসায়ী জুয়ারুল হক বলেন, শীতের সময় আলু ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ বাড়ে। তাই আমার কাছে যারা কীটনাশক নিতে আসে তাদের অঙ্কুর কোম্পানির সিসটিন নামক কীটনাশক দেই। তবে যাদেরই ওই কীটনাশক দিয়েছি তাদেরই ক্ষেতে সমস্যা হয়েছে। আমি কোম্পানির প্রতিনিধিকে জানাইছি তারা এসে ওই কীটনাশক গুলো নিয়ে গেছে পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ‘ বিষয়টি জানা আছে আমাদের কাছে কৃষকরা আর অভিযোগ করেনি। আমরা গিয়ে কিটনাশকগুলোর স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।