ক্ষোভে গলায় ফাঁস দেওয়া স্কুল শিক্ষার্থীর ১০দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু
বদরগঞ্জে ফেসবুকে ছবি ভাইরাল করার হুমকি
আঞ্চলিক প্রতিনিধি:
রংপুরের বদরগঞ্জে বখাটে যুবকের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি ঘটনায় ক্ষোভ ও অপমান সইতে না পেয়ে জান্নাতী আক্তার নামে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। ঘটনার ১০দিন পর সোমবার(১২ ফেব্রুয়ারি) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের বৈরামপুর হাটখোলাপাড়ায়। জান্নাতী আক্তার উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের বৈরামপুর হাটখোলাপাড়ার জান্নাতুল ইসলামের মেয়ে। সে একই এলাকার বৈরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগির পরিবারকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার কথা বলে বদরগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বখাটেদের দেওয়া ভয়ভীতি ও হুমকি সইতে না পেয়ে ক্ষোভে অপমানে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেয় জান্নাতী আক্তার। ওইদিন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহতের পরিবার ও থানা সুত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে পার্শ্ববতীর্ একই উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী মৌলভীপাড়ার জাহিদুল ইসলামের ছেলে জালালের সঙ্গে পরিচয় হয় জান্নাতী আক্তারের। এক পর্যায়ে প্রেমের প্রস্তাব দেয় জালাল। এতে রাজী ছিলনা মেয়েটি। পরে বখাটে জালাল মেয়ের প্রতিবেশী রবিউল ইসলামের ছেলে রিক্শাভ্যান চালক মাসুদার রহমানকে ম্যানেজ করে। কৌশলে জান্নাতীকে ডেকে মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে মাসুদার রহমান। ওই ছবি জালালকে দেয় মাসুদার। এসময় প্রেমের প্রস্তাবে রাজী হওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হয়। জান্নাতীর আক্তার তার কথায় সাড়া না দেওয়ায় জালালের সঙ্গে তার ছবি এডিট করে ফেসবুকে ভাইরাল করার ভয় দেখানো হয়। এতেও রাজী হয়নি মেয়েটি। পরে জালালের পক্ষ নিয়ে মাসুদার রহমান নির্জন বাড়ীতে একলা পেয়ে ফেসবুকে ছবি ভাইরাল করার ভয়ভীতি ও গালাগাল করে চরম অপমান করে জান্নাতীকে। এসময় জান্নাতীর বাবা জান্নাতুল ইসলাম ইটভাটায় কাজ করছিলেন। মা শিউলী বেগমও ছিল ভুট্রা ক্ষেতে নিড়ানির কাজে। এক পর্যায়ে ক্ষোভ ও অপমান সইতে না পেয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেয় জান্নাতী আক্তার। বিষয়টি টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁস থেকে অচেতন অবস্থায় প্রতিবেশিরা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে ১০দিন অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সকালের দিকে জান্নাতী আক্তার মারা যান। পরে বিষয়টি হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ মরদেহের ময়না তদন্ত করার জন্য কোতয়ালী থানা পুলিশকে অবগত করে। সেখানে তার মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
এলাকাবাসী বাবুল মিয়া ও আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘বখাটেদের ফাঁদে পড়ে মেয়েটি প্রাণ দিয়েছে। গত দশদিন ধরে সে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধিন ছিল। অবশেষে সোমবার সকালে মেয়েটি মারা যায়।
জান্নাতী আক্তারের চাচা তানজিরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি অনেক ছোট। তাকে জোর করে প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। প্রেমের প্রস্তাবে সে রাজী ছিল না। কৌশলে কথা বলার ফাঁকে ওর ছবি তোলে প্রতিবেশি মাসুদ। পরে ওই ছবি বখাটে জালালের ছবির সঙ্গে সংযুক্ত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায় তারা। এতে আমার ভাতিজী ভয় পেয়ে। এছাড়াও বাড়ীতে কেউ না থাকায় জালাল ও মাসুদ জান্নাতীর ওপর চড়াও হয়। এ ক্ষোভ ও অপমান সইতে না পেয়ে সে সবার অজান্তে গলায় ফাঁস দেয়। পরে বিষয়টি জানতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সে মারা যায়। আমরা ওই দুই বখাটের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।’
বদরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। রংপুরে মরদেহের সুরতহাল করা হয়। পরিবারের লোকজন চাইলে বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ভিকটিমের পরিবারকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে।’