কাজ একই, মজুরি অর্ধেক
আসাদুজ্জামান সাজু,লালমনিরহাট:
পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পাই। একসঙ্গেই কাজে আসি। সন্ধ্যার পর পুরুষরা মজুরি পায় ৫০০ টাকা আর আমি পাই ৩০০। পুরুষের চেয়ে একটু কাজ কম করি না। এ ভাবেই কথাগুলো বললেন ফরিদা বেগম নামে এক নারী। ফরিদা বেগম (৪৫) ও তার স্বামী কবিদুল ইসলাম (৫৩) দুজনই কৃষি শ্রমিক। কৃষি জমিতে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর কালমাটি এলাকায়। প্রতিদিন একসঙ্গেই কাজ শুরু করেন তারা, কাজ শেষও করেন একসঙ্গে। দুজনের কাজ ও শ্রমের পরিমাণ একই হলেও মজুরি সমান নয়। কবিদুল দৈনিক মজুরি পান ৫০০ টাকা আর ফরিদা পান ২০০ টাকা।
গ্রামে বিকল্প কোনো কাজ না থাকায় বাধ্য হয়েই কম মজুরিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে ফসলের ক্ষেতে কাজ করি। অর্ধেক মজুরিতে কাজ করতে না চাইলে গ্রামে কাজও পাওয়া যায় না। এমন না যে, আমি স্বামীর তুলনায় কম কাজ করি, তবুও স্বামীর মজুরি আমার চেয়ে বেশি বলেন ফরিদা।
ফরিদার স্বামী কবিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। কখনো কখনো দেখা যায় নারী শ্রমিকরা পুরুষদের তুলনায় বেশি কাজ করছেন। তবু তাদের অর্ধেক মজুরি দেওয়া হয়। এই গ্রামের অন্য নারীরাও মজুরি নিয়ে অসস্তোষ ও ক্ষোভ জানান।
আমেনা বেগম (৩৩) নামের অপর এক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। পুরুষদের চেয়ে আমাদের নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ মানুষ পান—সিগারেট খাওয়ার জন্য গিয়ে প্রায় ১৫/২০ মিনিট দেরি করে। আমরা নারীরা জরুরি কাজ ছাড়া কাজ বাদ দিই না। তবুও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়। পুরুষের চেয়ে অর্ধেক মজুরী দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে মালিকে কাজ দেবে না। এজন্য আমরা নারীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করি না। নারীদের মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন।
নারী শ্রমিক কুলসুম আক্তার বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই স্বাবলম্বী হতে আমিও আলু খেতে কাজ করছি। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও দিন শেষে অর্ধেক মজুরি পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত কষ্টের। এ মজুরি বৈষম্য নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন ববিতা বেগম। তিনি বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা ভাবা যায় না।
লালমনিরহাট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, নারী কৃষি শ্রমিকরা বহুকাল ধরে ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত হচ্ছেন। ফসল বহন করা ছাড়া ফসলের ক্ষেতে সব কাজই নারী শ্রমিকরা করেন। নারী শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়াটা সমাজে প্রচলিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হলে তারা তাদের অধিকার আদায় করতে পারবে বলে মনে করি।