রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই
রংপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জিএম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নির্ভর। আর সেই পণ্যগুলো কয়েকটি কোম্পানি আমদানী করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা ইচ্ছা মতো পণ্যের দাম বাড়ায়। সরকারও সিন্ডিকেটের কাছে কিছুটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চাইলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তারা পণ্য আমদানি না করলে দেশের বাজারে পণ্যের অভাব তৈরি হবে। বর্তমানে মনে হচ্ছে দেশে সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী।
জিএম কাদের বলেন, রমজানের আগেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এমনিতে মানুষ কষ্টে আছে, অভাবে আছে। তাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। বাজার গুটি কয়েক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জনগণের মুক্তি নেই।
সোমবার বিকেলে পৈত্রিক নিবাস রংপুরে ৪ দিনের সফরে এসে রংপুর সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা করে প্রশাসন ও পুলিশের একটি চৌকুস দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ—পুলিশ কমিশনার উৎপল রায়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও পীরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর আলম যাদু মিয়া, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ কেন্দ্রীয়, রংপুর জেলা ও মহানগর, বিভিন্ন উপজেলা জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃত্তি বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রায় সবগুলো আসনেই প্রার্থী ছিল। নির্বাচন নিরপেক্ষ পরিবেশে হয়নি, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণ মূলক হয়নি বলে আমি সংসদের সমাপনী ভাষণে বলেছিলাম। তবে আইনানুগভাবে নির্বাচন হয়ে গেছে। তাই বলা যায় এখানে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয়নি। কিছু জায়গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও সেখানে অংশগ্রহণমূলক হয়নি, কিছু জায়গায় সরকারি দলের প্রার্থীরা পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়েছে, আবার কিছু জায়গায় ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত ছিল। নির্বাচনের পর রেজাল্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। কারণ নির্বাচনে তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। দেশের সার্বিক জনগণের মতামতের প্রয়োজন হচ্ছে না। রংপুরে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা ভাল রয়েছে। আমরা নির্বাচনে আছি ও থাকব। অংশ না নিলে নির্বাচন কেমন হচ্ছে নিজেরাও জানতে পারতাম না ও জনগণকেও জানাতে পারতাম না।
বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলেরা কোন্দল তৈরি করে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। এবার যারা সম্মেলন করেছে তারা জাতীয় পার্টির অংশ নয়। কিছু লোক সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি সরকার হল ব্যবহারের জন্য যে অনুমতি দিয়েছে, তা কিছুটা হলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বলা যায়। এভাবে বেআইনি পৃষ্ঠপোষকতা দূর করা না গেলে স্বাভাবিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হবে। সেই সাথে নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে চলার কথা তা বাধাগ্রস্ত হবে, দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে বলে তিনি মনে করেন।