ঊর্ধ্বাগতির বাজারে সাড়া ফেলেছে সাবেক পুলিশ সদস্যের ১ টাকার হোটেল
বায়েজিদ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা):
দ্রব্যমূল্যের টানা ঊর্ধ্ব গতিতে দিশাহারা যখন সাধারণ মানুষ। রমজানে তা যখন আরো লাগামহীন তখন গাইবান্ধার রোজাদারদের স্বস্তি দিচ্ছে এক দাম্পত্তির উদ্যোগে পরিচালিত "১ টাকার হোটেল"।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই এক ইফতার খাবার হোটেলের সন্ধান মিলছে গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ৭নং পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য জুয়েল মিয়া ও তার স্ত্রী লিপি বেগম পরিচালনা করছেন খাবার হোটেলটি। সেখানে ১ টাকায় পাওয়া যায় পিয়াজু,ডালপুরি,বেগুনি ও আলুর চপ। এছাড়াও রয়েছে খেজুর,ছোলা বুট ও বুন্দিয়া সহ নানা ধরনের ইফতার আইটেম। স্বল্প সময়ে ব্যতিক্রম-সেবাধর্মী হোটেলটির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পিয়াজু, ডালপুরি, বেগুনি, ছোলা ও বুন্দিয়াসহ নানা ইফতার সামগ্রী তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লিপি বেগম। যা প্রতি পিস বিক্রি হয় মাত্র এক টাকায়।
শুধু ইফতারি সামগ্রী নয়, অর্ধেক মূল্যে এখানে পাওয়া যায় রুটি,পরোটা,চিকেন,সামুচা চিকেন, চিকেন বিরিয়ানি এবং তন্দুরি চা। এসবের মধ্যে খেজুর ছাড়া সব আইটেম নিজ হাতে তৈরি করেন লিপি বেগম।
স্বল্প দাম এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় এখানকার মূল ক্রেতা গ্রামের নিম্নের মানুষ। অল্প মূল্যে এইসব ইফতার সামগ্রী কিনতে পেরে তারা খুশি। এছাড়া ফেসবুকের কল্যাণে বিষয়টি জেনে দূরদূরান্ত থেকে এমন কি পাশের জেলা থেকেও সখের বসে খেতে আসেন অনেকে। উদ্ধগতির এই বাজারে এক টাকার এমন সব মুখ রোচক খাবার খেতে আসেন তারা।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস মিয়া এবং আলেফা বেগম বলেন, এখানে প্রতি পিস এক টাকা দামে পিয়াজু,আলুর চপ,বেগুনি পাওয়া যায় যা এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আশীর্বাদ। রোজাদার অল্প টাকায় এখানে থেকে ইফতার কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
লিপি বেগম বলেন, আমরা যেহেতু কম মূল্যের খাবার ইফতার সামগ্রী বিক্রি করি। এ কারণে উৎপাদন খরচ কমাতে নিজেরাই সব কাজ করে থাকি। আমাদের সব সময় চেষ্টা থাকে মানুষকে টাটকা এবং সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা। যাতে মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়।
জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা যেহেতু নিজেরাই সব কাজ করি। তাই কম মূল্যে খাবার বিক্রিতে লাভ কম হয়। কিন্তু লোকশানো গুনতে হয় না। আমাদের লক্ষ্য ব্যবসার পাশাপাশি মানুষের সেবা করা। দ্রব্যমূল্যের উদ্ভগতির বাজারে নিজেরা একটু কম লাভ করে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করা। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারিতে। এ সময় ক্রেতা চাপ বেরে যায়। ফলে তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগত কারণে তিন বছর আগে পুলিশ কনস্টেবল এ চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সাম্প্রতিক ১ টাকার খাবারের দোকান শুরু করেছেন। আর এখান থেকেই যা আয় হয় তাতে দুই সন্তানসহ চার সদস্যের চাহিদা কোন রকম মিটে যায়। আগামীতে বড় পরিসরে ব্যবসার পাশাপাশি এ ধরনের সেবার পরিধি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানান, জুয়েল মিয়া ও লিপি দম্পতির এক টাকার হোটেল নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ সুফল পাচ্ছে। বিশেষ করে রোজাদারদের ইফতারি তে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।