ঘরোত খাবার নাই,ক্যামন করি চলং এলায়?
গোলাম মাহবুব,চিলমারী(কুড়িগ্রাম):
ব্যাটা দুইটেয়ও কোন খোঁজ খবর নেয় না। মাইনসের বাড়ীত খুজি খাং(খাই) বাহে মুই। ঘরোত খাবার নাই,ক্যামন করি চলং এলায়? সরকার একনা ঘর দিছে,আর কোন খবর নেয় না। এ প্রতিবেদককে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন ষাট উর্ধ্বো বিধবা নারী আঞ্জু বেওয়া। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাধীন রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা মিনাবাজার এলাকার মৃত আজিজুল হকের স্ত্রী আঞ্জু বেগম।
সোমবার দুপুরে মিনাবাজার তিন থানার মোড় এলাকায় রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখা যায় আঞ্জু বেগমকে। সামনে ক্যামেরা ধরতেই তিনি নিজের অজান্তে বির বির করে অপলক দৃষ্টিতে দুঃখের কথা গুলো জানিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ব্যাটা দুইটেয়ও কোন খোঁজ খবর নেয় না। মাইনসের বাড়ীত খুজি খাং বাহে মুই। ঘরোত খাবার নাই,ক্যামন করি চলং এলায়? সরকার একনা ঘর দিছে,আর কোন খবর নেয় না। স্বামীর নাম জিজ্ঞাস করতেই চোখ ফ্যাকাশে করে বলতে থাকেন তার স্বামীর নাম মৃত আজিজল হক,গত হয়েছেন ১০বছর। ৪জন ছেলে—মেয়ে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েরা স্বামীর বাড়ীতে,আর ছেলে দুটা তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টস করে। গত ২বছর ধরে তারা কোন খোঁজ খবর রাখে না। নিজের জায়গা জমি না থাকায় খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে ছিলেন তিনি। বছর দুয়েক আগে আশ্রয়নের ঘর পেয়ে সেখানেই তার বাস। কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকী থাকায ঘরের সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ অফিস। ফলে অন্ধকারেই থাকতে হয় তাকে। মোম কিংবা কেরোসিন কেনারও সামর্থ নেই তার।
আঞ্জু বেগম জানান,বর্তমানে ৫বাড়ী মিলে ৭জন মহিলাকে আরবি পড়িয়ে মাসে ৭০০টাকা পান তিনি। ওই ৭০০টাকাই তার মাসিক আয়। রমজানে অপর এক বাড়ীতে তারাবির নামাজ পড়ানোর বিনিময়ে রাতের খাবার খাচ্ছেন তিনি।
এ সময় তার পাশ্বে বসে থাকা পাশ্ববতীর্ জামাল বাদশার স্ত্রী আফরুজা বেগম ও কামিজ উদ্দিনের স্ত্রী পেয়ারা বেগমসহ অনেকে জানান, ছেলেরা খেঁাজ খবর না রাখায় গত ৮মাস ধরে আঞ্জুকে এলাকাবাসী এক—আধ টুকু যা খেতে দেয় তাই দিয়ে দিন চলে তার। ওই নারীর মৃগি রোগ থাকায় কারো বাড়ীতে কাজও করতে পারে না সে। চুলায় আগুন জ্বালানোর সামর্থতো নেই,এমনকি তার ঘরে আলো জ্বালানোর মত কোন ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারের থাকতে হয় তাকে। সব মিলিয়ে নিদারুন কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আঞ্জু বলে জানায় পাশ্ববতীর্ ওই নারীরা।
রমনা মডেল ইউনিয়নের ৯নং পাত্রখাতা ওয়ার্ডের সদস্য মো.মনসুর আলী বলেন,ওই নারীর এমন পরিস্থিতির কথা আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা জানান, সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মিনহাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।