২২ আশ্বিন, ১৪৩১ - ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ - 07 October, 2024

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

আমাদের প্রতিদিন
6 months ago
805


রৌমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার খেরুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাক বোর্ড-বেঞ্চসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি বিদ্যালয়ের ৪৬ টি জয়েন্ট বেঞ্চ, ৩ টি ব্ল্যাক বোর্ড ও ১ টি হোয়াইট বোর্ড বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত করেন। নয়ারহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ইমান আলী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমিও এলজিএসপি'র মাধ্যমে ১৬ জোড়া জয়েন্ট বেঞ্চ দিয়েছিলাম। সেগুলোও প্রধান শিক্ষক বিক্রি করেছেন।’

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি মো. মোনসুর আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে ৩ লাখ টাকার মূল্যমানের ৪ রুম বিশিষ্ট একটি পুরাতন টিনশেড ঘর ছিল। সেই ঘরটি আমাকে অবহিত করা ছাড়াই এবং কোনো ধরণের রেজুলেশন ছাড়াই ভেঙে ফেলেন এবং অল্প কিছু জিনিস বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করে বেশিরভাগ জিনিস বিক্রি করেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি অনুদানের টাকা দীর্ঘদিন থেকে আত্মসাত করে আসছেন। স্লীপের জন্য ৭০ হাজার টাকা, প্রাক—প্রাথমিকের জন্য ১০ হাজার টাকা, রুটিন মেইনটেন্যান্সের জন্য ৪০ হাজার টাকার যথাযথ ভাবে খরচ না করে আত্মসাত করেন এবং খরচের নকল বিল ভাউচার তৈরি করেন প্রধান শিক্ষক মসিহুর।

তিনি বলেন, শুধু অর্থ আত্মসাতই নয় তিনি (প্রধান শিক্ষক) মাসে  তিন—চার দিনের বেশি বিদ্যালয়ে আসেন না। ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এ মাত্র ৪ দিন উপস্থিত ছিলেন। সে প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ দাখিল করেছি। তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণের ফটোকপি নিয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এর আগে আমার সন্তানের উপবৃত্তির টাকা হেড মাষ্টারের এক পছন্দের ব্যক্তির বিকাশ নম্বরে যাইত। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আমাকে কয়েক মাসের টাকা হেড স্যার ফেরত দেয়। ওমর আলী নামক এক অভিভাবক বলেন, তিনি (প্রধান শিক্ষক) স্কুলের সোলার, পানির ট্যাংক, পাম্প, টিউবওয়েল, সোলারের ফ্যান, বাচ্চাদের খেলনা পর্যন্ত বিক্রি করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্যার নিয়মিত চক—ডাস্টার পর্যন্ত কিনে দেন না। কখনো ক্লাসও নেন না।

অভিযোগের বিষয় জানতে প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পরিচয় দিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।

এ প্রসঙ্গে চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো. আবু সালেহ্ সরকার বলেন, ইতিমধ্যে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। যদিও বা অভিযোগে এসব বিষয়ে উল্লেখ না থাকলে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন এক অভিভাবক। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সরেজমিন তদন্তে জন্য গত ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ তারিখে ফরহাদ হোসেন খন্দকারসহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং দশ কার্য দিবসের মধ্যে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা গত ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ তারিখে বিদ্যালয়ে এসে সরেজমিন তদন্ত করেন এবং অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে তাদের লিখিত বিবৃতি গ্রহণ করেন। তদন্ত শেষে তিনি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার কথা স্বীকার করেন।

  

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth