বীর নিবাসের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বীর নিবাসের ৩৫টি বাড়ির কাজের মধ্যে ৩০টির কাজ সমাপ্ত করে বাকী ৫টি বাড়ির কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার। গত ৫বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও সুরাহা না পেয়ে হতাশ বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাগণ। ঠিকাদারকে শোকজ করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন সংশ্লিষ্টরা। একাজে ঠিকাদার নিযুক্ত ছিলেন চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি নুরুজ্জামান আজাদ জামান। তার গাফিলতির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বীর নিবাসের অধিবাসীদের।
জানা গেছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট চিলমারী উপজেলায় ২য় দফায় ৩৫ টি বীর নিবাস নির্মাণের বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপজেলা প্রশাসন ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস বাস্তবায়নের কাজ করছেন। এক তলাবিশিষ্ট ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের বীর নিবাসের এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে। কিন্ত ২য় দফার ৩৫টি বীর নিবাসের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হলেও প্রায় ২ বছরেও বাকি ৫টির কাজ শেষ হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দরজা, জানালা লাগানো হয়নি। ইলেক্ট্রিক সংযোগ না দেয়াসহ করা হয়নি রং। ৩টির টাইলস লাগানো হলেও দুটির টাইলস লাগানোর কাজও বাকি রয়েছে।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন, রানীগঞ্জের আব্দুল খালেক, বালাবাড়ীর কিসামত বানু এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, রানীগঞ্জ বাজার এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা রিয়াজুল হক সর্দার, মদনমোহন এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিনুলই সলাম ও ভাটিয়া পাড়ার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাহের বেগম।
রানীগঞ্জের মৃত: মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, মৃত্যুর আগে আমার বাবা বীর নিবাসে উঠতে চেয়েছিলেন কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতার কারণে তিনি সেই ঘরে আর উঠতে পারলেন না। মনে আফসোস রেখে মারা গেলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করেই ৩ দফার বিলের টাকাও উত্তোলন করেছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ’বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজটি যথাসময়ে শেষ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী নুরুজ্জামান আজাদ জামানের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আজ কাজ শুরু করার কথা ছিলো ঈদের কারণে হলো না, ঈদের পরে কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম জানান, ‘ইতোপূর্বে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ শেষ না করলে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’