নাগেশ্বরীতে বন্যার আগেই গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভঙ্গন নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

ডা. শেখ মো. নূর ইসলাম, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বন্যা শুরুর আগেই গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে কারও চলে গেছে আবাদী জমি, কারও ভিটে মাটি, এমনকী স্কুল, মাদরাসা, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বন্যা শুরুর আগেই দুই কিলোমিটারব্যাপী নদী ভাঙ্গনে চোখের সামনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ী, শত শত বিঘা আবাদী জমি, গাছপালা এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনের খুটি। ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বাড়িঘর অনত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বালারহাট গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান একাধিকবার গঙ্গাধর নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন এখানকার মানুষ। দুই দফা ভেঙ্গেছে বালাহাট বাজার, কন্যামতি আকবর হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদরাসা। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেললেও এবার ভাঙ্গনে ভেসে যাচ্ছে সেগুলো। ফলে আবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে বাজার, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাসহ পাকা সড়ক। তাই ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী।
স্থানীয় নওসের আলীর স্ত্রী নূর বানু বেগম জানান, গঙ্গাধর নদীর ভাঙ্গনে তাদের বাড়ি ১০ বার ভেঙ্গে গেছে নদীগর্ভে। নদী ভাঙ্গতে ভাঙতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। এখন নদীর কিনারে বাড়ি তাদের। যেভাবে নদী ভাঙছে তাতে করে বসতভিটা কখন নদীর পেটে চলে যায় তার ঠিক নেই। এবার বাড়ি ভাঙলে মাথাগেঁাজার ঠাঁই থাকবে না তাদের। কন্যামতি গ্রামের আমোদ আলী জানান, তাদের ৭ বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এ পর্যন্ত ৩ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন তিনি। এবারও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছেন। বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ জানান, বসতভিটা ছাড়াও তাদের আবাদি জমি, সুপাড়ি বাগান, পুকুরসহ ভাঙ্গনে ১৫ বিঘা জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। এখন মাথা গেঁাজার ঠাঁই হারিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন তিনি। সেটিও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। এরপর স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবেন সে ঠিকানাও নেই তাদের। বলতেই কেঁদে ফেলেন এই বদ্ধ। কন্যামতি আকবর হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহালম মিয়া জানান, ইতোপূর্বে ২ বার তাদের বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ভেঙ্গে গেছে। আবারও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে বিদ্যালয়টি। এবার ভেঙ্গে গেলে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে এখানকার ছেলে মেয়েদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য নজর আলী জানান, কয়েবার এখানকার স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন বসতভিটা ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। আবারও সেগুলো ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। সরকার যদি স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা না নেয় তবে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে এখানকার মানুষকে।
এ বিষেয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার নদের তীর রক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে এর বাইরে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে ভাঙ্গন রোধে অনুমতি বা বরাদ্দ নেই, এ কারণে চরে কোনো ধরণের কাজ করতে পারছি না।