দিনাজপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ সাড়ে ৩৩ হাজার গরু যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে

দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আগামী পরশু (সোমবার) মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহুর্তে দিনাজপুরে জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাটগুলো। বরাবরের মতো এবারও ক্রেতারা বলছেন—দাম বেশী, আর বিক্রেতারা বলছেন—কম। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও দেশীয় গরুর দখলে পশুর হাটগুলো। জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ বলছে—দিনাজপুরের চাহিদা মিটিয়ে এবার ১ লাখ সাড়ে ৩৩ হাজার পশু যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও হাট সংশ্লিষ্ঠরা এও বলছেন, ক্রেতা—বিক্রেতাদের সুবিধার্থে হাটগুলোতে স্বাস্থ্যকর পশু বেচাকেনা নিশ্চিত করতে ও জালটাকা প্রতিরোধে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
কোরবানী উপলক্ষে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী শতাধিক হাট বসলেও দিনাজপুর জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের হিসাব মতে, জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটের সংখ্যা ৬৩টি। শেষ মুহুর্তে এসব হাটে উঠছে প্রচুর পরিমানে গরু। হচ্ছে বেচা—কেনাও। তবে সীমান্তবেষ্টিত এই জেলার পশুর হাটগুলোতে এক সময় প্রচুর পরিমান ভারতীয় গরুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও কয়েক বছরের মতো এবারও দেশীয় গরুর দখলে রয়েছে হাটগুলো। লক্ষ্য করা যায়নি ভারতীয় গরুর।
দাম নিয়ে বরাবরের মতো এবার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে খানিকটা অসন্তোষ। এবারও ক্রেতারা বলছেন—হাটে তুলনামুলক দাম বেশী। আর বিক্রেতারা বলছেন—সব জিনিষের দাম বাড়লেও, বাড়েনি গরুর দাম।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দিনাজপুর পৌর এলাকার রেলবাজার হাটে কোরবানীর গরু কিনতে আসা দিনাজপুর সদর উপজেলার সাদেকুল ইসলাম বলেন, তাদের বাজেট ছিলো ৭০ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু হাটে এসে দেখছেন, গরুর দাম বেশী। তাই ৮ হাজার টাকা বেশী দিয়ে ৭৮ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে গরু। তিনি বলেন, হাটে বড় সাইজের গরুর তুলনায় ছোট সাইজের গরুর চাহিদা বেশী। এ কারনে ছোট গরুর দাম তুলনামুলক বেশী।
অপরদিকে বিক্রেতারা বলছেন—এবার দাম তুলনামুলক কম। রেলবাজার পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালু মোহাম্মদ বলেন, পশুখাদ্যসহ সব জিনিষের দাম বেড়েছে। গরু পালন করতে খরচ বেড়ে গেছে। সে তুলনায় গরুর দাম বাড়েনি।
এদিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও হাট সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন—ক্রেতা—বিক্রেতাদের সুবিধার্থে হাটগুলোতে স্বাস্থ্যকর পশু বেচাকেনা ও জালটাকা প্রতিরোধে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের জেলা ভেটেরিনারী কর্মকর্তা ডাঃ আশিকা আকবর তৃষা বলেন, স্বাস্থ্যকর পশু কেনা—বেচা নিশ্চিত করতে দিনাজপুর জেলায় ২৯টি মেডিক্যাল টিম হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু যাতে না আসতে পারে—সেজন্য প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছেন বলেন জানান তিনি। তিনি জানান, জালটাকা প্রতিরোধে হাটগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ বসানো হয়েছে।
ডাঃ আশিকা আকবর তৃষা বলেন, কোরবানী উপলক্ষে এবার দিনাজপুরের খামারগুলোতে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩০টি গবাদিপশু প্রস্তুত হয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুর জেলার চাহিদা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৬টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫৪টি কোরবানীর পশু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।