বন্ধ করে দেয়া ১১৬ বছরের পুরনো কুড়িগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবি
জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রাম থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল যোগাগের প্রস্তাব
আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের ঘোষণার পর কুড়িগ্রামে উন্নয়নের আলোর মুখ দেখছে জেলাবাসী। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে বাণিজ্যিক হওয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। পাল্টে যাবে এ জেলার দৃশ্যপট। কিন্তু উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা।সড়ক ও নৌ পথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এজন্য বন্ধ করে দেয়া ১১৬ বছরের পুরনো কুড়িগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসি।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম —২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ হামিদুল হক খন্দকার ইতোমধ্যে রেলপথ সম্প্রসারন করে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত নেয়ার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে তার বক্তৃতায় বলেছেন।
এব্যাপারে লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামে পুরাতন স্টেশনটির তেমন গুরুত্ব নেই। তবে ভবিষ্যতে গুরুত্ব বেড়ে গেলে স্টেশনটি আবার চালু করা হবে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৮৫৩ সালে ভারত উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার পর ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কুড়িগ্রামে যোগাযোগের জন্য রেলপথ চালু করে। তৎকালিন কুড়িগ্রাম মহকুমা শহরের সাথে যোগাযোগের জন্য কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর এলাকায় রেলবাজারে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয়। ধরলার অব্যাহত ভাঙনে স্টেশনটি নদী গর্ভে বিলীন হলে ১৯২৬ সালের দিকে বর্তমান পুরাতন শহরে ১২ একর ৪২ শতক জায়গার উপর স্টেশনটি পুনঃস্থাপন করা হয়।যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ব্যবসা—বাণিজ্য ও যাতায়তের এই স্টেশন ব্যবহার করে লালমনিরহাটের মোগলহাট হয়ে ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট দিয়ে ভারতের যেত। দেশভাগের পর সে পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ অংশে ওই রেলপথ কাগজে—কলমে থাকলেও ধীরে ধীরে ভূমিদস্যদের হাতে চলে যায়। দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৭ সালে কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুর হয়ে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত রেল পথ সম্প্রসারণ করা হয়। এজন্য ১৯৬৭ সালে কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজায় জনগনের সুবিধার্থে কুড়িগ্রামে আরও একটি রেলওয়ে স্টেশন নিমার্ণ করা হয়। ২০০১ সালে জোট দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে ভূমি দস্যুরা একজোট হয়ে পুরাতন স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়ারার জন্য নানা বাহানা করে। স্টেশন তুলে ঐ স্থানে বাসটার্মিনাল, মার্কেট, ভূরুঙ্গারীÑ কুড়িগ্রাম বইপাস সড়ক, শিশু পার্কসহ নানান স্থাপনার দাবীতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক করা হয় তৎকালিন কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আবু বকর সিদ্দিককে। সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক জানান, তৎকালিন যোগাযোগ উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ৩০জুন ২০০৬ সালে মন্ত্রনালয় পুরাতন রেল স্টেশনটি সরকারিভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। তৎকালীন যোগাযোগ উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু বলেছিলেন মানুষ আসে স্টেশন নেয়ার জন্য অথচ কুড়িগ্রামের নেতৃবৃন্দ এসেছে স্টেশন বন্ধ করার জন্য।স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে না থাকলেও রাজনৈতিক চাপে বন্ধ করতে বাধ্য হন। এরপর সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক পুরাতন স্টেশনটি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন। এখন কি অবস্থায় রয়েছে তিনি তা জানেন না।এরপর সেনা সমর্থিত সরকার দেশ পরিচালনায় আসলে স্টেশন এলাকা অক্ষত অবস্থায় থাকে। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে ভূমিদস্যুরা নড়েচড়ে বসে। গত ১৬ বছরে ভূমিদস্যুরা পুরো স্টেশন এলাকা দখল করে নেয়। বর্তমানে স্টেশনটি দেকভাল করার মতো কেউই নেই। প্রতিনিয়ত স্টেশনের টিন, লোহার খুটি, শাল কাঠের খুটি এমনকি প্লাটফরমের ইট চুরি হয়ে গেছে। নিজের জায়গা মনে করে ভূমিদস্যুরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর নির্মাণ করছে। অনেকে জায়গা দখল করে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। দখলবাজরা শক্তিশালী হওয়ার কারণে কর্তর্ৃপক্ষ জায়গা উদ্ধারে তেমন তৎপড়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।